হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠদের লন্ডনে সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক: গার্ডিয়ান তদন্তে ফাঁস

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২০ ১০:১৪:১৩
হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠদের লন্ডনে সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক: গার্ডিয়ান তদন্তে ফাঁস

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে শুরু হয় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। এই প্রেক্ষাপটে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অনেকেই যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন। তবে সম্প্রতি গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক যৌথ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই বিতর্কিত ব্যক্তিদের অনেকেই যুক্তরাজ্যে নিজেদের বিলাসবহুল সম্পত্তি গোপনে বিক্রি, হস্তান্তর কিংবা পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) ইতোমধ্যে কয়েকটি উচ্চমূল্যের সম্পত্তি জব্দ করলেও, সম্পদ পাচারকারীরা নতুন কৌশলে আইনি ফাঁক গলে লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের ল্যান্ড রেজিস্ট্রির তথ্য বলছে, শুধু গত এক বছরে ঢাকায় তদন্তাধীন ব্যক্তিদের সম্পত্তি সংক্রান্ত অন্তত ২০টি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের সায়েম সোবহান আনভীর এবং তার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সম্পদ।

গার্ডিয়ান জানায়, নাইটসব্রিজের চারতলা একটি বিলাসবহুল টাউনহাউস, যার মালিক ছিলেন সায়েম সোবহান, তা গত এপ্রিলে একাধিক সন্দেহজনক প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর হয়। প্রথমে সেটি একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে বিনা মূল্যে হস্তান্তর করা হয়, যার পেছনে রয়েছে একটি লিচটেনস্টাইনভিত্তিক বহুজাতিক আবাসন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা। এরপর একই সম্পত্তি ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে এক রহস্যময় হিসাবরক্ষকের মালিকানাধীন নবগঠিত কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়, যার অনলাইন উপস্থিতি নেই, কিন্তু লন্ডনের বহু সম্পত্তি লেনদেনে সংশ্লিষ্ট।

পরবর্তীতে বসুন্ধরা পরিবারের আরেক সদস্য শাফিয়াত সোবহানের মালিকানাধীন সারে-এর ভার্জিনিয়া ওয়াটারের ৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের প্রাসাদতুল্য বাড়ির হস্তান্তর সম্পর্কেও দুটি আবেদন জমা পড়ে

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী গত এক বছরে লন্ডনে চারটি সম্পত্তি লেনদেনে যুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে রিজেন্টস পার্কের প্রান্তে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি জর্জিয়ান টাউনহাউসের বিক্রি অন্যতম। তার আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এসব লেনদেন রাজনৈতিক অস্থিরতার আগেই নির্ধারিত ছিল এবং কোনো বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন।

এছাড়া, গার্ডিয়ান আরও একজন প্রভাবশালী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ডেভেলপারের নাম গোপন রেখে জানান যে, গত বছর তিনিও একাধিক সন্দেহজনক লেনদেনে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আনিসুজ্জামান এই ডেভেলপারকে অনিয়মিত ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছে ইউসিবির চেয়ারম্যান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ও ভাগ্নে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানও এই তালিকায় রয়েছেন। তাদের মালিকানাধীন মেফেয়ারের ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট সম্প্রতি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের অপরাধ তদন্ত সংস্থা। দু’জনেই অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে তদন্তে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের সর্বদলীয় দুর্নীতি বিরোধী সংসদীয় দলের সভাপতি জো পাওয়েল গার্ডিয়ানকে বলেন, “আমরা অতীতে দেখেছি, যথাসময়ে ব্যবস্থা না নিলে দুর্নীতির সম্পদ দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়ে যায়। তাই তদন্ত চলাকালীন জব্দ প্রক্রিয়ায় দ্রুততা আনতে হবে।”

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ