“একাত্তর ও গণতন্ত্র প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়”: মির্জা ফখরুলের দৃপ্ত উচ্চারণ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৯ ১৭:২৬:৪২
“একাত্তর ও গণতন্ত্র প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়”: মির্জা ফখরুলের দৃপ্ত উচ্চারণ
গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: প্রথম আলো

একাত্তর ও গণতন্ত্র প্রশ্নে কোনো ছাড় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, "১৯৭১ আমাদের আত্মপরিচয়ের মূলে, আর গণতন্ত্র হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যতের রূপরেখা। এ দুটি প্রশ্নে কোনো আপস সম্ভব নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং একটি পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই চাই।" শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আয়োজিত "গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ" শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, "যত দেরি হচ্ছে, পরিস্থিতি তত ঘোলাটে হচ্ছে। যারা জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল, তারা আবার সংঘটিত হয়ে এই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। এখন সময়, সংস্কার, সনদ এবং নির্বাচন—এই তিনটি বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছানোর। তা না হলে দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে।"

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এখনই এই সুযোগ কাজে না লাগালে বাংলাদেশ আরও বহু বছর পিছিয়ে যাবে। যারা গণতন্ত্র ও জনগণের অগ্রযাত্রায় বিশ্বাস করে না, তারা পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করছে। তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেরি করলে সেই দায়ভার তাদেরই নিতে হবে। সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, "গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি। যদি আমরা তা অর্জন করতে ব্যর্থ হই, তবে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা প্রক্রিয়াটি ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি বিষয় আজ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।"

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা যে রকম রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রিক পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছিলাম, তা বাস্তবে পরিলক্ষিত হয়নি।” এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ৯০ ভাগ মানুষের নামও কেউ জানে না। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক মহল স্বার্থে এ অভ্যুত্থানের প্রকৃত ত্যাগকে অস্বীকার করছে।” তিনি বলেন, “হাসিনার পতন না হলে আবু সাঈদকে জঙ্গি বানানো হতো, আজ আমরা অনেকেই রাজনৈতিকভাবে নির্মূল হয়ে যেতাম।”

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, "প্রশাসনের চরিত্র অপরিবর্তিত রয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টাদের ওপর মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। যদি সরকারের কর্মক্ষমতার নম্বর দিতে হয়, আমি ১০ এর মধ্যে ৪ দেব।" জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল বিভেদের রাজনীতি দূর করে জনগণের স্বার্থে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা। আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি বিচারব্যবস্থা, যেখানে গুম-খুনের বিচারের আশ্বাস থাকবে। নির্বাচনের মাঠের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।"

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ১২–দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের নাঈম জাহাঙ্গীর এবং নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত। আলোচনায় বক্তারা একমত হন যে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ কণ্টকাকীর্ণ হলেও তা অর্জন করা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সম্মিলিতভাবে সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে প্রাধান্য পেতে পারে এবং গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ