তিন বন্ধুর উদ্যোগে ১৫০ গ্রামে পৌঁছাল বিদ্যুৎ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৯ ১২:৫৪:১০
তিন বন্ধুর উদ্যোগে ১৫০ গ্রামে পৌঁছাল বিদ্যুৎ
ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গুমলা জেলার অনেক গ্রাম এক সময় ছিল অন্ধকারে ডুবে থাকা নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সুবিধাবিহীন এলাকা। তবে এখন সেই এলাকাগুলোয় এসেছে আলোর ঝলকানি, বেড়েছে নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস। আর এই পরিবর্তনের পেছনে আছে তিন বন্ধুর উদ্যোগ—‘গ্রাম উর্জা’।

২০১৫ সালে সামীর নাইয়ার ও অংশুমান লাথ ঝাড়খণ্ডে গিয়ে ভাবেন, কীভাবে সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মানুষদের বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া যায়। কিছুদিনের মধ্যেই তারা প্রসাদ কুলকার্নিকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন সামাজিক উদ্যোগ ‘গ্রাম উর্জা’। তাদের লক্ষ্য ছিল—মাইক্রো গ্রিডের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে সাশ্রয়ী ও টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১৫০টির বেশি গ্রামে সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ফলে রাতের অন্ধকারে ভয় পাওয়া জীবন থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামের মানুষ এখন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন। নারীসহ গ্রামের সবাই এখন বিদ্যুৎ-সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় গ্রাম শক্তি কমিটির সভায় নারীরাও যুক্ত হচ্ছেন, বিদ্যুৎ বিল কেমন হবে তা নিয়েও মতামত দিচ্ছেন।

যেমন, গিরিজাতোলি গ্রামের সুচিতা বা জানান—প্রথমে তাদের পরিবারপ্রতি ২ হাজার রুপি করে জমা রাখতে হয়েছিল। এখন প্রতি মাসে ১০০ রুপি করে জমা রাখেন তারা, যাতে গ্রিড চালু রাখতে ও রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা না হয়। এটি তাদের মতে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়।

বিদ্যুৎ আসার ফলে কৃষির ক্ষেত্রেও এসেছে বড় পরিবর্তন। আগে যেসব কৃষককে শহরে গিয়ে দিনমজুরি করতে হতো, তারা এখন সৌরচালিত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজ গ্রামে থেকেই ফসল ফলাচ্ছেন। অম্বাদাস ভোয়ে নামের এক কৃষক এখন বছরে একাধিক ফসল ফলাতে পারছেন এই প্রযুক্তির সাহায্যে।

সৌর স্ট্রিট লাইট বসানোয় সাপ বা বন্যপ্রাণীর ভয়ও অনেক কমেছে। বিশেষ করে রাতে নারীরা এখন সহজে বাইরে চলাচল করতে পারছেন।

এই প্রকল্পের মূল সাফল্যের কারণ হলো—স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা। ‘গ্রাম উর্জা’ এখন পর্যন্ত ১০৪টি সৌর মাইক্রো গ্রিড স্থাপন করেছে, যার মধ্যে ১০২টি এখনও কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। এসব গ্রিড স্থানীয় মানুষরাই পরিচালনা করেন, নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে রক্ষণাবেক্ষণ করেন, যাতে বাইরের সাহায্য ছাড়াই এগুলো টিকে থাকে।

শুধু ঝাড়খণ্ড নয়, মহারাষ্ট্রের নাসিকেও সৌর প্রযুক্তির মাধ্যমে বড় পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে নারীরা কুয়ায় নেমে পানি তুলতেন, এখন সৌরচালিত পাম্পের মাধ্যমে সেই পানি পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। ফলে ৪২০০ কৃষক প্রায় ৪৫০০ একর জমিতে এখন সেচ দিতে পারছেন।

সামাজিক উদ্যোগ ‘গ্রাম উর্জা’র মাধ্যমে ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে শুধু আলোই আসেনি—এসেছে জীবনের নতুন আশা ও উন্নয়নের পথ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ