ট্রাম্পের মাথার মুল্য ১.১৪ মিলিয়ন ডলার!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১১:০২:৩৩
ট্রাম্পের মাথার মুল্য ১.১৪ মিলিয়ন ডলার!

সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকির অভিযোগ নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাদ খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১২ দিনের একটি সম্ভাব্য যুদ্ধেরও নকশা ছিল। এই বক্তব্যের পরপরই ইরানজুড়ে বিস্ফোরণ ঘটে ক্ষোভের, এবং ইসলামি ধর্মীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত এতে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইরানের শীর্ষস্থানীয় দুই ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি এবং আয়াতুল্লাহ হোসেইন নুরি হামেদানি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সরাসরি ফতোয়া জারি করেন। ফতোয়ায় বলা হয়, যারা ইসলামী উম্মাহর সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার হুমকি দেয় কিংবা এ ধরনের ষড়যন্ত্র করে, তারা ‘মোহারেব’ অর্থাৎ আল্লাহর শত্রু হিসেবে বিবেচিত হবে। তাদের হত্যা বৈধ, এমনকি তা ধর্মীয়ভাবে প্রশংসনীয় কাজও হতে পারে বলে ব্যাখ্যা দেন তারা।

এই পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের ইসলামিক প্রচার সংস্থার প্রধান মনসুর ইমামির বক্তব্য। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, “যদি কেউ ট্রাম্পকে হত্যা করতে সক্ষম হয়, তাকে দেওয়া হবে ১০০ বিলিয়ন তোমান, যা প্রায় ১.১৪ মিলিয়ন ডলারের সমান।” তার এই ঘোষণার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

এদিকে, ইরানের একটি ওয়েবসাইট ‘থারডটআইআর’ (Third.ir)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা এই ফতোয়ার পক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার পাশাপাশি সরাসরি ট্রাম্পকে হত্যার জন্য অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করছে। সাইটটির তথ্যমতে, তারা ইতোমধ্যে ২ কোটির বেশি (২১,৮৭৮,৫২৫) মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে আরবি, পারসি ও হিব্রু ভাষায় বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, “যারা ইসলামি বিপ্লবের প্রতিনিধিকে হুমকি দেবে, তাদের বিচার করাই আমাদের কর্তব্য। যারা এ কাজে সহায়তা করবে, তারা পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন।”

তবে এসব ঘটনার মাঝে ইরানের রাষ্ট্রপক্ষ এক ভিন্ন বার্তা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে জানান যে, এসব ফতোয়ার সঙ্গে ইরানি সরকার বা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার কোনো সম্পর্ক নেই। তার ভাষায়, “আমার জানা মতে, এগুলো রাষ্ট্রীয় নয় বরং কিছু ব্যক্তিগত মত, যেগুলো সরকার অনুমোদিত নয়।”

তবে ইরানের রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাষ্ট্র এবং ধর্মগুরুদের অবস্থান অনেক সময় আলাদা হলেও প্রভাবশালী। ফলে এই ফতোয়াগুলো রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ না হলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যেহেতু আয়াতুল্লাহ খামেনির ঘনিষ্ঠ ধর্মীয় নেতা আলিরেজা পানাহিয়ান প্রকাশ্যে বলেন, যারা খামেনিকে হত্যার হুমকি দেবে, তারা মোহারেব, এবং মুসলমানদের উচিত প্রতিশোধ গ্রহণ করা—তাতে এসব বক্তব্যের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।

এদিকে, এসব ফতোয়া এবং পুরস্কার ঘোষণাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও কূটনৈতিক মহল এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং রাজনীতিকে সহিংসতায় পরিণত করার একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করছে। তারা বলছে, ধর্মীয় নেতাদের এমন বক্তব্য শুধু অঞ্চলীয় উত্তেজনা বাড়ায় না, বরং তা বৈশ্বিক নিরাপত্তার ঝুঁকিও বহন করে।

ঘটনাটি ১৯৮৯ সালের সেই বিখ্যাত ফতোয়ার স্মৃতিও জাগিয়ে তুলেছে, যখন সালমান রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা। সেই ঘোষণার ৩০ বছরের বেশি সময় পর নিউ ইয়র্কে রুশদির ওপর ছুরি হামলার ঘটনা এই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করেছে যে, এমন ঘোষণার বাস্তব পরিণতিও হতে পারে।

উপসংহারত, খামেনিকে হত্যার হুমকি ও এর পাল্টা ফতোয়ার জবাব এখন আর কেবল রাজনৈতিক কথাবার্তা নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে এক বহুমাত্রিক দ্বন্দ্বের অংশ যেখানে ধর্ম, রাজনীতি, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক আইন এক জায়গায় এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে একটি নতুন সংঘাতের সূচনা করতে পারে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ