বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশে মন্ত্রী হলেই বদলে যায় মনোভাব: মির্জা ফখরুল

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ০৯:৩১:৩৫
বাংলাদেশে মন্ত্রী হলেই বদলে যায় মনোভাব: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের রাজনীতিতে মন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতার যে আমূল পরিবর্তন ঘটে, তা দেশকে ধীরে ধীরে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেয় এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে যে-ই মন্ত্রী হয়ে যায়, সে এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করে। তার সামনে-পেছনে গাড়ি, স্যালুট, বাঁশি- এই আনুষ্ঠানিকতা তাকে ধীরে ধীরে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। এটি নিছক সৌন্দর্য নয়, বরং স্বৈরতান্ত্রিক চেতনার সূচনা।”

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘সিভিল ডিসকোর্স ন্যাশনালস–২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি এবং দ্য বাংলাদেশ ডায়ালগ (টিবিডি) যৌথভাবে এ আয়োজন করে।

বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক সংকট, সমাজে উদ্ভূত মূল্যবোধগত বিচ্যুতি এবং তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। একটি সিগন্যাল, একটি বেলুন, একটি গ্লোরিফায়েড লেবেল দিয়ে কেউ নেতা হয় না। নেতৃত্ব আসে দায়বদ্ধতা ও মানুষের সঙ্গে সংযোগ থেকে।”

তার মতে, নেতৃত্বের আড়ালে এই ‘গ্লোরিফিকেশন’ অর্থাৎ ‘মাননীয়’ সংস্কৃতিই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার এই শব্দগুলোর পেছনে যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি আছে, সেটি থেকেই অটোক্রেসির জন্ম হয়। আমরা চাই না শব্দে শ্রেষ্ঠত্ব, চাই চিন্তায় নেতৃত্ব।”

সমাজে প্রজন্মের মধ্যে বেড়ে চলা দূরত্বকে দেশের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। “ঢাকার চিন্তা আর ঠাকুরগাঁওয়ের চিন্তা এক নয়। অথচ রাষ্ট্রে আমরা সবাই এক নীতিতে চলি। এই দূরত্ব, এই বোধগত ফারাক—এটিকে কমিয়ে আনতে না পারলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রজন্ম, সেই ট্রান্সফর্মেটিভ ফোর্স তৈরি করতে পারব না,” বলেন তিনি।

তরুণদের সঙ্গে মেলামেশা ও মতবিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “জেনারেশন গ্যাপ আমাদের রাজনৈতিক সংকোচ বাড়িয়ে দিয়েছে। তরুণদের চিন্তা, ভাষা ও গতিকে বোঝার চেষ্টা জরুরি। একই সঙ্গে তাদেরকেও আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেখা প্রয়োজন।”

মতের অমিল, বিতর্ক ও অসন্তোষকে গণতন্ত্রের অঙ্গ মনে করে ফখরুল বলেন, “আমরা লিবারেল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাস বলে—তুমি যা বলছ, আমি তা একমত না হলেও তোমার বলার অধিকার রক্ষা করব। এটাই সুস্থ গণতন্ত্রের শর্ত।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমি বয়সে অনেক, কিন্তু এখনো আশা হারাইনি। আমি বিশ্বাস করি, তরুণরাই ভবিষ্যতে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আরও বেশি সচেতন, যুক্তিবাদী, উদার ও মানবিক হয়ে।”

টিবিডির পরিচালক সাইফ রুবাবের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি ছিল রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয়ে নতুন প্রজন্মের সচেতনতা ও নেতৃত্ব গঠনের এক প্রগতিশীল চর্চা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম, অ্যাডকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম ফারহান চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু, ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি শাহাদাত হোসাইন, প্রধান মডারেটর অধ্যাপক আকতারুজ্জামান ও টিবিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবায়েত মান্নান রাফি।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ