বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও কার্বন

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন লঙ্ঘনের দ্বারপ্রান্তে, তিন বছরের মধ্যেই শেষ হতে পারে কার্বন বাজেট

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৯ ১৮:০৮:০০
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন লঙ্ঘনের দ্বারপ্রান্তে, তিন বছরের মধ্যেই শেষ হতে পারে কার্বন বাজেট

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতীকী সীমা—১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস—ভাঙার পথে মাত্র তিন বছরের ব্যবধান রয়েছে, যদি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন বর্তমান হারে অব্যাহত থাকে। এমনই ভয়াবহ পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বের ৬০ জন শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানীর একটি নতুন গবেষণা, যা বর্তমান জলবায়ু বাস্তবতার সবচেয়ে হালনাগাদ বিশ্লেষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে প্রায় ২০০টি দেশ প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা উষ্ণতা ১৮০০ সালের শেষের দিকের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখবে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি এড়ানো যায়। কিন্তু বাস্তবে, জীবাশ্ম জ্বালানির রেকর্ড ব্যবহারে এবং বনাঞ্চল ধ্বংসে এ লক্ষ্য চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

ইউনিভার্সিটি অফ লিডসের অধ্যাপক পিয়ার্স ফস্টার বলেন, “সবকিছু যেন ভুল পথে এগোচ্ছে। আমরা নজিরবিহীন হারে উষ্ণতা বৃদ্ধি, সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি—এবং এর সবকিছুই উচ্চমাত্রার নির্গমনের সরাসরি ফল।”

২০২০ সালের শুরুর দিকে, বিজ্ঞানীরা হিসেব করেছিলেন যে পৃথিবীকে ১.৫ ডিগ্রি সীমার মধ্যে রাখার জন্য মানবজাতির সামনে মাত্র ৫০০ বিলিয়ন টন CO₂ নির্গমনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরুতে এই "কার্বন বাজেট" কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩০ বিলিয়ন টনে। প্রতি বছর ৪০ বিলিয়ন টন হারে নির্গমন অব্যাহত থাকলে, এই বাজেট ফুরিয়ে যাবে ২০২৭-এর মধ্যেই।

যদিও তখনও তাত্ত্বিকভাবে কিছু বছর সময় থাকবে ১.৫ ডিগ্রি পৌঁছাতে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন—এই মাত্রা অতিক্রম করলে তাৎক্ষণিক বা ভবিষ্যতের CO₂ অপসারণ প্রযুক্তির উপর নির্ভর করা বিপজ্জনক। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক জোয়েরি রোজেলজ বলেন, “বড় মাত্রায় সীমা অতিক্রমের ক্ষেত্রে, CO₂ অপসারণ প্রযুক্তি উষ্ণতা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট কার্যকর নাও হতে পারে।”

২০২৩ সাল ছিল ইতিহাসে প্রথম বছর যখন বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির চেয়েও বেশি ছিল। যদিও একটি বছর পার হওয়া প্যারিস চুক্তি ভঙ্গের শামিল নয়, তবুও এটি স্পষ্ট করে যে মানবসৃষ্ট উষ্ণায়নই মূল চালিকা শক্তি। বর্তমান উষ্ণতার বৃদ্ধির হার প্রতি দশকে প্রায় ০.২৭ ডিগ্রি, যা ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু আবহাওয়ার চরমতা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ নয়। অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশ শোষণ করছে মহাসাগর, যার ফলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, বদলে যাচ্ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, গলছে হিমবাহ ও বরফপুঞ্জ। ১৯৯০-এর পর থেকে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মাঝে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিতও আছে। গবেষকরা বলছেন, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে কার্বন নির্গমনের বৃদ্ধি কমছে। কিন্তু “দ্রুত ও কঠোর নির্গমন হ্রাস” এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।

বিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন, "১.৫ ডিগ্রি নিচে থাকলেই ‘নিরাপদ’ এবং তার ওপরে উঠলেই ‘বিপজ্জনক’—এই ধারণা সরলীকৃত। বাস্তবতা হলো, উষ্ণতার প্রতিটি দশমিক বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে বিপর্যয়ের গভীরতা—অতিবৃষ্টি, খরা, তাপপ্রবাহ, বরফ গলন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সবই ত্বরান্বিত হয়।"

অধ্যাপক রোজেলজের মতে, “পরবর্তী দশকে নির্গমন কমানোই পারে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার পাল্টে দিতে। আমরা যতটা উষ্ণতা এড়াতে পারি, ততটাই কম ক্ষতি হবে, কম মানবদুঃখ বাড়বে, এবং আমাদের সমাজগুলো টিকে থাকার আরও বড় সুযোগ পাবে।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত