জামালপুরে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে দুই মাদরাসার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: আহত বহু, আটক ৭

সত্য নিউজ: জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় ছাত্রী ভর্তির মতো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দুটি মাদরাসার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ চরম সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। রোববার (১১ মে) উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামে সংঘটিত এই ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এবং এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতজনকে আটক করেছে।

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে ৭ জনকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে, ৬ জনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে এবং গুরুতর আহত একজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ১১ জন বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের মধ্যে কড়ইতলা মন্ডলবাড়ীর ইসরাফিল মন্ডলের ছেলে কালাচান মন্ডল (৫০), শামছুল মন্ডলের ছেলে আশরাফ আলী (৫৫), শাহাদত হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম (২০), দানেশ মন্ডলের ছেলে মুকুল মন্ডল (২৬), হাবু মন্ডলের ছেলে আলম মন্ডল (৫৫), আশরাফ মন্ডলের ছেলে হারুন মন্ডল (২৬) এবং আলম মন্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৬) শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই এলাকার রফিকুল মন্ডলের ছেলে রিফাত মন্ডলকে (২২) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।অপরদিকে, শেখবাড়ীর আহতদের মধ্যে শাজাহান শেখের ছেলে মো. রমজান শেখ (২৮), মৃত জুল হাবেসের ছেলে জয়নাল আবেদিন (৫৫), মৃত আব্দুল রফিকের ছেলে রাজু শেখ (৪৭), আব্দুল খালেকের ছেলে মো. রাফাছ শেখ (৪০), মৃত ইজ্জত আলীর ছেলে জিন্নত শেখ (৫০) এবং কছম উদ্দিনের ছেলে মো. রিয়াজল হক (৬০) জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার রাতে। কড়ইতলা এলাকার সুলতান হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষক মো. উবাইদুল হক পার্শ্ববর্তী রাবেয়া বসরী মহিলা মাদরাসার এক ছাত্রীকে নিজ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান। এসময় রাবেয়া বসরী মহিলা মাদরাসার শিক্ষক মো. মফিজুর রহমানও সেখানে উপস্থিত হলে দুই শিক্ষকের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ সৃষ্টি হয়।

এই উত্তেজনার রেশ ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতি মীমাংসার লক্ষ্যে রবিবার সকালে কড়ইতলা গ্রামে একটি সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে, আলোচনা ফলপ্রসূ না হয়ে এক পর্যায়ে উভয় শিক্ষকের অনুসারী, যারা স্থানীয়ভাবে মন্ডলবাড়ী ও শেখবাড়ীর বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত, তাদের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি ও পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ২৫ জন কমবেশি আহত হন। খবর পেয়ে ইসলামপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করে।

আহত রিয়াজুল হক সাংবাদিকদের জানান, "সকালে দুই পক্ষের লোকজন মীমাংসার জন্য বসেছিল। হঠাৎ করেই তারা উত্তেজিত হয়ে মারামারি শুরু করে। আমি তাদের থামাতে করতে গেলে আমার মাথায় আঘাত করা হয়। এরপর কী হয়েছে, তা আর বলতে পারি না।"