গুমাই বিলে জালে উঠল ২২ কেজি বোয়াল!

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল যেন এখন জীবন্ত মাছের ভাণ্ডার। বর্ষার পানিতে প্লাবিত এই বিল দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য উৎস হিসেবে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চন্দ্রঘোনা হাবিব গোট্টা স্লুইস গেট থেকে শুরু করে ইটভাটা এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত গুমাই বিলে স্থানীয়দের জাল ও টেঁটায় ধরা পড়েছে একাধিক বিশাল বোয়াল ও দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ।

বিশেষ করে ২২ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ স্থানীয়দের নজর কাড়ে, যা চন্দ্রঘোনার বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৫ হাজার ৩০০ টাকায়। আধুর পাড়ার মো. মোকারম নামে এক যুবক শৌখিনভাবে মাছ ধরতে গিয়ে এটি টেঁটায় ধরে ফেলেন। এ ছাড়া একই দিনে ইব্রাহিম, সালাম সওদাগর ও আরমান নামের আরও তিন ব্যক্তি যথাক্রমে ৯, ১১ ও ৪ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ শিকার করেছেন। সব মিলিয়ে অন্তত আটটি বড় বোয়াল মাছ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গুমাই বিল প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালপথে প্লাবিত হয়। এই পানির স্রোতই বিলে নিয়ে আসে নদী ও শাখা খালের মাছ। বর্ষার শুরুতেই সৃষ্টি হয় অনুকূল পরিবেশ, যার ফলে বড় বড় মাছ যেমন বোয়াল, ট্যাংরা, শোলসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

উপজেলা মৎস্য দপ্তরের ক্ষেত্র সহকারী ওবায়দুল হক বলেন, “প্রতিবছর এ সময় নিশ্চিন্তপুর, আধুরপাড়া, নতুন গ্রামসহ আশপাশের মৌসুমি শিকারিরা বড় বোয়াল মাছ ধরতে সক্ষম হন। বিভিন্ন শাখা খালের মাধ্যমে এই মাছ গুমাই বিলে প্রবেশ করে। তলিয়ে যাওয়া জমিতে ছড়িয়ে পড়ে মাছ, যা শিকারিরা জাল ও টেঁটার মাধ্যমে ধরে থাকেন।”

গুমাই বিলের মাছ ধরা শুধু খাদ্য বা আয়ের উৎস নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও শৌখিনতার এক অনন্য প্রকাশও। গ্রামের মানুষের কাছে বর্ষার মৌসুম মানেই মাছ ধরার আনন্দ, একপ্রকার উৎসব। এতে যেমন স্থানীয় অর্থনীতির চাকা ঘুরে, তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের বার্তাও দেয়।

এই মাছ ধরার মৌসুম রাঙ্গুনিয়াকে ‘শস্যভাণ্ডার’ ছাড়াও ‘মৎস্যভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিতি দেয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রাকৃতিক মাছের উৎস টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সংরক্ষণ ব্যবস্থা, সচেতনতা ও দায়িত্বশীল শিকার প্রক্রিয়া।