বাংলাদেশে ইলন মাস্কের স্টারলিংক: সুবিধা,বৈশিষ্ট্য,প্যাকেজ ও খরচ 

সরকারের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়া জুলাই গণআন্দোলনের সময় ইন্টারনেট ও টেক্সট মেসেজিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে প্রযুক্তির হাত ধরে এবার সেই নির্ভরতা বদলে যেতে শুরু করেছে। কারণ, বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট পরিষেবা ‘স্টারলিংক’, যা যে কোনো জায়গায়—যথা দুর্গম পাহাড়, দ্বীপ, সীমান্ত কিংবা আন্দোলন-পীড়িত নগরজুড়েও—ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে সক্ষম।

বিশ্বজুড়ে ইতোমধ্যেই প্রায় ৭০০০ স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করেছে স্পেসএক্স, যার মূল লক্ষ্য পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান ও ভারতের আগেই এই সেবায় যুক্ত হয়ে প্রযুক্তি অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে পৌঁছাল।

গ্রাম-গঞ্জ থেকে আন্দোলনের মাঠ: স্টারলিংকের সম্ভাবনা

স্টারলিংকের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি হলো—বিভিন্ন সংকটে, এমনকি ইন্টারনেট ব্লকড সময়েও সংযোগ সচল রাখা। অর্থাৎ, আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এটি হতে পারে নির্ভরযোগ্য বিকল্প।শুধু শহর নয়, দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল ও সীমান্ত এলাকায় স্টারলিংক ইন্টারনেট শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিপ্লব ঘটাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

সুবিধা এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য

স্টারলিংকের কার্যপ্রণালী অনেকটা স্যাটেলাইট টিভির মতো। একজন গ্রাহকের ওয়েব অনুরোধ সরাসরি কাছাকাছি কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে তা সংশ্লিষ্ট সার্ভারে পৌঁছে, পুনরায় একই প্রক্রিয়ায় ফিরে আসে।

মূল সুবিধাসমূহ:

• যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, সেখানেও সংযোগ সম্ভব
• ৫০–২০০ এমবিপিএস স্পিডে ইন্টারনেট ব্রাউজিং
• ২০–৫০ মিলিসেকেন্ড লেটেন্সি (রিয়েলটাইম অ্যাপের জন্য উপযোগী)
• সহজ ইনস্টলেশন, কোনো প্রযুক্তি দক্ষতা ছাড়াই
• মোবিলিটি সুবিধা: যেকোনো জায়গায় বহনযোগ্যভাবে সংযোগ স্থাপন

প্যাকেজ ও খরচ: কীভাবে কাজ করবে বাংলাদেশে?

বাংলাদেশে স্টারলিংকের দুটি প্যাকেজ চালু আছে:

• রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজ: মাসিক খরচ ৬,০০০ টাকা
• রেসিডেনশিয়াল লাইট প্যাকেজ: মাসিক খরচ ৪,২০০ টাকা
• এককালীন ডিভাইস চার্জ: ৪৯,৮০০ টাকা

দুই প্যাকেজেই আনলিমিটেড ডেটা এবং সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস ডাউনলোড স্পিড পাওয়া যাবে। একটি স্টারলিংক সেটআপ সাধারণত ৫০–৬০ মিটার পর্যন্ত ওয়াই-ফাই সিগন্যাল পৌঁছে দিতে পারে। রিপিটার ও মেশ ব্যবহারে একাধিক ফ্ল্যাট বা পরিবারের মধ্যে এটি ভাগ করে ব্যবহার করাও সম্ভব।

কী থাকছে একটি স্টারলিংক কিটে?

একটি পূর্ণাঙ্গ স্টারলিংক কিটে থাকছে:

• ১টি স্যাটেলাইট ডিশ
• ১টি Wi-Fi রাউটার
• মাউন্টিং ট্রাইপড
• প্রয়োজনীয় ক্যাবল ও সংযোগ উপকরণ

ইউজার শুধু আকাশমুখী জায়গায় ডিশ বসিয়ে রাউটারে সংযোগ দিলেই ইন্টারনেট চালু হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ থেকে কীভাবে অর্ডার করবেন?

গ্রাহকরা www.starlink.com ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করে অর্ডার দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক কার্ড বা বাংলাদেশি ব্যাংকের ডুয়াল কারেন্সি কার্ড দিয়েই পেমেন্ট করা যাবে। সাধারণত ৩–৪ সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি পৌঁছে যাবে।

সাইবার স্বাধীনতার এক নতুন অধ্যায়?

যখন সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট বন্ধ করে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়, তখন স্টারলিংক বিকল্প ডিজিটাল স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের জন্য কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে, বিশেষ করে যখন সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রবাহে হস্তক্ষেপ করে।

ইন্টারনেট এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক মানবিক অধিকার হয়ে উঠেছে। স্টারলিংক হয়তো এই অধিকারের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে বাংলাদেশের জন্য—যেখানে তথ্য, সংযোগ ও স্বাধীনতা এখন মহাকাশ থেকেই ভেসে আসবে।