যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ট্রাম্পের, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে এক নাটকীয় ঘোষণায় জানান, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ১২ দিন ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘোষণা করে তিনি উভয় পক্ষকে ‘সাহস ও বিচক্ষণতার’ জন্য ধন্যবাদ জানান।

তবে এই শান্তির ঘোষণা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মঙ্গলবার সকালেই ইসরায়েল অভিযোগ তোলে যে ইরান যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বিবৃতিতে জানান, “আমি আইডিএফকে নির্দেশ দিয়েছি তেহরানে হামলা অব্যাহত রাখতে এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করতে।”

আইডিএফ-এর এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইরান থেকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভূপাতিত করা হয়েছে। অপরদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এবং এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি সিএনএন-এ বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির পর থেকে কোনো হামলা করিনি। তবে ইসরায়েল যদি ভুল করে, দখলীকৃত ভূখণ্ডে আমাদের পাল্টা আঘাত আসবে।”

এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের টালমাটাল পরিস্থিতিতে অনেকেই উদ্বিগ্ন। কাতার যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। একইসঙ্গে চীনও শান্তিচুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি বাস্তবে কতটা স্থায়ী হবে, সেটি নিয়েই মূল প্রশ্ন। কারণ, মাত্র একদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে, যার জবাবে ইরানও শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।

আল উদেইদ ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বেশিরভাগই কাতারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপাতিত করে। শুধু একটি ক্ষেপণাস্ত্র নির্জন এলাকায় পড়ে, যাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ট্রাম্প ইরানের আগাম সতর্কতা বার্তাকে ধন্যবাদ দেন, যদিও অনেক পর্যবেক্ষক একে কৌশলগত মুখরক্ষা হিসেবে দেখছেন।

ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধবিরতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, “এখনই সময় গাজার যুদ্ধ শেষ করার, বন্দিদের মুক্ত করার এবং জাতীয় পুনর্গঠনের।”

উল্লেখযোগ্য যে, চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৫৫ হাজারের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে, এবং বহু ইসরায়েলি এখনো বন্দি রয়েছেন। ফলে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও পরিস্থিতি যে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে—এমনটি বলা যাচ্ছে না।

বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি মুহূর্তের দিকে, যেখানে একটি ভুল সিদ্ধান্ত আবারও গোটা অঞ্চলকে যুদ্ধের বিভীষিকায় ঠেলে দিতে পারে।

সূত্র : সিএনএন