পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, আইএইএর জরুরি বৈঠক!

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা অত্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান সংকটের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) আগামী সোমবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত তাদের সদর দফতরে একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে আসা আনুষ্ঠানিক অনুরোধের ভিত্তিতে এই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে, যেখানে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পারমাণবিক ও সামরিক উত্তেজনা, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং পরবর্তী সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ’র খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের ওই হামলার পর ইরান ব্যাপকভাবে পাল্টা জবাব দিচ্ছে এবং দেশের রাজধানী তেহরানে কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্রিয়তার আওয়াজ শোনা গেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে অন্তত দুটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ইসরাইলের হামলা এখনও চলছে এবং ইরান তা প্রতিহত করছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। এর পাশাপাশি তিনজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান প্রায় ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের হাইফা শহরের বাজান তেল শোধনাগার গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা দেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিকাঠামোর জন্য বড় ক্ষতি।

এদিকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা নিজেদের ইরানের সহযোগী হিসেবে ঘোষণা করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছে। তারা ইরানের প্রতি সমর্থন জাহির করেছে এবং এই অঞ্চলের সামরিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, তেহরান ‘আত্মরক্ষার’ জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং ইসরাইল যদি হামলা বন্ধ করে, তাহলে ইরানও দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্যোগ নেবে। তিনি বলেন, “আমরা কোনো আগ্রাসন চাই না, তবে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষা করতেই হবে।”

বর্তমান সংকট পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্রুত উত্তেজনা প্রশমন ও সংকট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেছে। তবে, ইরান-ইসরাইলের সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। আইএইএর জরুরি বৈঠক কিভাবে এই সংকটের প্রভাব কমাতে পারে এবং পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, তা এখন বিশ্বজুড়ে নজরের কেন্দ্রে রয়েছে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক