পাকিস্তানে স্কুলবাসে আত্মঘাতী হামলা, নিহত ৫

পপাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের খুজদার জেলায় সেনাবাহিনীর পরিচালিত একটি স্কুলের বাস লক্ষ্য করে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। এ ঘটনায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার না করলেও, ইসলামাবাদ সরাসরি ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে, যদিও কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

বিস্ফোরণ ও হতাহতের বিস্তারিত

বুধবার সকালে খুজদারে যখন বাসটি ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছিল, তখনই হামলাটি ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তিন শিশু ও দুই প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জেলা প্রশাসক ইয়াসির ইকবাল জানিয়েছেন, হামলাটি ছিল সুপরিকল্পিত। আত্মঘাতী হামলাকারী রাস্তার পাশে ওঁত পেতে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনও পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী এবং তদন্ত চলছে।

ইসলামাবাদের অভিযোগ: ‘ভারতের প্রতিনিধি’

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক যৌথ বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই নৃশংস সহিংসতার পেছনে রয়েছে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী সন্ত্রাসীরা।” তবে পাকিস্তান সরকার এখন পর্যন্ত এই অভিযোগের পক্ষে কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

ভারতের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, মন্তব্য চাওয়ার পরও নয়াদিল্লি কোনো সাড়া দেয়নি।

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পটভূমি

ঘটনার পেছনে রয়েছে চলমান দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপট। চলতি মাসের শুরুর দিকে দুই পারমাণবিক প্রতিবেশীর মধ্যে সীমান্তে চারদিনব্যাপী লড়াইয়ের পর ১০ মে থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। তবে সংঘর্ষ থেমে থাকলেও কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা উত্তেজনা বহাল রয়েছে।

বেলুচিস্তান: বিপুল সম্পদের নিচে লুকানো সংকট

আয়তনে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হলেও জনসংখ্যায় সবচেয়ে ছোট প্রদেশ বেলুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক অবহেলা এবং কেন্দ্রবিরোধী বিদ্রোহে জর্জরিত। যদিও প্রদেশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ ও চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (CPEC) অংশ, তথাপি নিরাপত্তাহীনতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) অন্যতম, যারা এই বছরের মার্চে একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ৩১ জনকে হত্যা করেছিল।

অতীতের ভয়াবহ স্মৃতি

এই হামলা পাকিস্তানের জনগণের কাছে স্মরণ করিয়ে দেয় ২০১৪ সালের সেই বিভীষিকাময় দিন, যখন পেশোয়ারে একটি সামরিক স্কুলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের হামলায় ১৩০-এর বেশি শিশু প্রাণ হারায়। সে সময় দেশব্যাপী জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও নিরাপত্তা কাঠামোর সংস্কার হয়।

খুজদারের হামলা শুধু একটি সহিংস ঘটনার বেশি কিছু — এটি পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও আঞ্চলিক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ। সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জটিলতা বাড়াতে পারে। শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।