দুই বিভাগে ভাগ কর প্রশাসন, এনবিআর-আইআরডির বিদায়

সত্য নিউজ:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে কর প্রশাসনে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে হাঁটছে সরকার। এ দুটি সংস্থার জায়গায় গঠিত হচ্ছে দুটি নতুন বিভাগ—‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। এ–সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ গত রাতে জারি করা হয়েছে, যাতে এই দুটি নতুন বিভাগের দায়িত্ব ও কাঠামো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নতুন রাজস্ব নীতি বিভাগের প্রধান কাজ হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে এমন করনীতি প্রণয়ন, যা রাজস্ব আহরণকে টেকসই ও সম্প্রসারিত ভিত্তিতে গড়ে তুলবে। এই বিভাগ যৌক্তিক করহার, সীমিত কর অব্যাহতি, এবং উত্তম কর ব্যবস্থাপনার নীতির ভিত্তিতে কাজ করবে। এর আওতায় থাকবে স্ট্যাম্প আইনসহ বিভিন্ন কর-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংশোধন, যেমন আয়কর, ভ্রমণ কর, দান কর, সম্পদ কর, কাস্টমস শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আবগারি ও সম্পূরক শুল্ক, সারচার্জ এবং অন্যান্য ফি ও কর নির্ধারণ ও সংস্কারের বিষয়। পাশাপাশি কর আইন প্রয়োগের বিশ্লেষণ, কর আহরণের কার্যকারিতা মূল্যায়ন, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও দ্বৈত কর পরিহার ব্যবস্থার পর্যালোচনা, এবং তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রাজস্ব পূর্বাভাস ও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণও থাকবে এই বিভাগের দায়িত্বে। রাজস্ব নীতি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট খাতে অভিজ্ঞ জনবল দিয়ে—যেমন আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস, অর্থনীতি, গবেষণা, আইন, পরিসংখ্যান, প্রশাসন ও নিরীক্ষা। এছাড়া এই বিভাগকে সহযোগিতার জন্য অর্থনীতিবিদ, রাজস্ব ও আইনবিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ মূলত কর ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে। এর অধীনে থাকবে বিদ্যমান আইন ও বিধির যথাযথ প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক চুক্তির বাস্তবায়ন, করসেবা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে করজাল সম্প্রসারণ, এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কৌশল উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন। এ বিভাগ রাজস্ব নীতি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে এবং নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে কর ফাঁকি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে এনবিআরের অধীনে থাকা জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্থানান্তরিত হবে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সেখান থেকে কিছু জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগেও পদায়ন করা যাবে। এই দুটি নতুন বিভাগ গঠনের মাধ্যমে সরকার কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়। দীর্ঘদিন ধরে এনবিআর একইসঙ্গে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দ্বৈত দায়িত্ব পালন করায় স্বার্থবিরোধ ও কাঠামোগত জটিলতা দেখা দিচ্ছিল। নতুন এই কাঠামোর মাধ্যমে সে সংকট দূর হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।