৩০ জুন দরপতনের শীর্ষে যারা 

৩০ জুন ২০২৫, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শেষ দিনে বাজারে বড় ধরনের দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ এবং অস্থিরতা তৈরি হয়। দিনের শেষে সবচেয়ে বেশি দরপতনের শীর্ষে উঠে আসে ‘বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি’ (BIFC), যার শেয়ারদর ৬.৬ টাকা থেকে কমে ৬.১ টাকায় দাঁড়ায়— অর্থাৎ প্রায় ৭.৫৮ শতাংশ পতন। একইভাবে ‘ডিএসএইচ গার্মেন্টস’ ৬.৩৩ শতাংশ, আর বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ (BERGERPBL) প্রায় ৬.২৫ শতাংশ দর হারায়। উল্লেখযোগ্যভাবে বার্জার পেইন্টসের মতো শক্তিশালী ও বড় মূলধনী কোম্পানির এমন দরপতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একপ্রকার বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এছাড়া উত্তরা ফিন্যান্স, লাভেলো আইসক্রিম, পিএলএফএসএল, আরামিট সিমেন্ট, মেট্রো স্পিনিং, ন্যাশনাল ফিড মিলস এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সসহ অন্যান্য কোম্পানিও উল্লেখযোগ্য পতনের মধ্য দিয়ে দিন শেষ করে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেনদেনের গড় হার অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটে বার্জার পেইন্টসে, যার দাম খোলার সময় ১,৭৩৬ টাকা থাকলেও দিনের শেষে তা কমে দাঁড়ায় ১,৫৯৫.৫ টাকায়, যা প্রায় ৮.০৯ শতাংশ পতনের শামিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পতন ঘটে উত্তরা ফিন্যান্সে—১০.২ টাকা থেকে কমে ৯.৪ টাকায়। একইভাবে ডিএসএইচ গার্মেন্টস, দুলামিয়া কটন, রাহিমা ফুড, শুরউইড, জাহিন স্পিনিং, ওরিয়েন্টাল অ্যাগ্রো এবং বিডি ওয়েল্ডিংের শেয়ারেও লক্ষণীয় হারে দর কমে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই পতনের পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে প্রফিট বুকিং তথা মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রিচাপ, কিংবা মৌসুমভিত্তিক মূল্য সংশোধন (technical correction)। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য এ ধরনের মূল্য সংশোধন হয়তো নতুন বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

বাজারে এমন আচরণ বিনিয়োগকারীদের জন্য একদিকে সতর্কবার্তা, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ প্রবণতা বিশ্লেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান বাজারে আতঙ্কিত হয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং মৌলিক শক্তি বিশ্লেষণ, কোম্পানির আয়-ব্যয়ের ধারা, ও ব্যবসায়িক কৌশল বুঝে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়াই হবে বিচক্ষণতা। সামগ্রিকভাবে, ৩০ জুনের এই দরপতন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শেয়ারবাজার সব সময় চূড়ান্তভাবে লাভবান হওয়ার ক্ষেত্র নয়, বরং এটি একটি পরিবর্তনশীল এবং মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্যপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্র যেখানে ধৈর্য ও বিশ্লেষণী সক্ষমতা অত্যাবশ্যক।