বিতর্ক পেরিয়ে বাজিমাত: পাকিস্তানে হিট দিলজিতের ‘সর্দারজি ৩’

ভারতের জনপ্রিয় পাঞ্জাবি অভিনেতা ও গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্ঝের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সিনেমা ‘সর্দারজি ৩’ অবশেষে মুক্তি পেয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। গত ২৭ জুন মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি মুক্তির আগেই ভারতে তুমুল বিতর্ক ও জল্পনা তৈরি করে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির-সহ একাধিক পাকিস্তানি শিল্পীর অংশগ্রহণ ভারতীয় দর্শকের একাংশের তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। এই পরিস্থিতিতে বারবার নিজেকে ব্যাখ্যা করতে হয় দিলজিৎকে, যিনি স্পষ্ট করে জানান, সিনেমাটি মুক্তি না পেলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন প্রযোজক ও সংশ্লিষ্টরা।

তবে এই সব বিতর্ক ও আশঙ্কাকে ছাপিয়ে সিনেমাটি অভাবনীয় সাফল্য পায় পাকিস্তানে, যেখানে মুক্তির প্রথম দিনেই এটি প্রায় ৫ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে। দেশটির প্রায় সব সিনেমা হলে ‘সর্দারজি ৩’-এর শো হাউজফুল হয়, যা পাকিস্তানে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। একইসঙ্গে এটি পাকিস্তানে সর্বোচ্চ ব্যবসা করা পাঞ্জাবি ভাষার সিনেমা হিসেবেও স্থান করে নেয়। এ সাফল্যে দারুণ খুশি দিলজিৎ নিজেই নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লেখেন— ‘দুইটি সিনেমাহল এরই মধ্যে হাউজফুল। দর্শকদের ভালোবাসা অসাধারণ।’

তবে ভারতীয় জনমনে সিনেমাটি নিয়ে বিতর্ক থামেনি। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, পহেলগাঁম হামলার পর পাকিস্তানের অংশগ্রহণে তৈরি সিনেমা ভারতে কীভাবে জায়গা পায়। ভারতের বহু সাংস্কৃতিক ও বিনোদন ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা সাধারণত প্রত্যাখ্যাত হয়। এই প্রেক্ষাপটে ‘সর্দারজি ৩’ যেন দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বন্দ্ব, আবেগ ও শিল্পসাহসের একটি প্রতীক হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিনেমাটি শুধুই বিনোদনের নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান সংস্কৃতি ও রাজনীতির দ্বৈরথে চলচ্চিত্র কীভাবে ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অর্জন করতে পারে, তারও একটি অনন্য উদাহরণ।

সবকিছু মিলিয়ে ‘সর্দারজি ৩’-এর সাফল্য ও বিতর্ক একে একদিকে বানিজ্যিকভাবে সফল করে তুলেছে, অন্যদিকে সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতাকেও নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। সিনেমাটি যেন এক নতুন প্রশ্ন তোলে বিচ্ছিন্নতা না মিলনের গল্প বলবে আগামী দিনের ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্র?

-অনন্যা, নিজস্ব প্রতিবেদক