শেয়ারবাজারে মালিকানার পালাবদল: ৮ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ, ৮ কোম্পানিতে উদ্যোক্তারা কোণঠাসা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারধারণ কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও আমার স্টক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৮টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দখল ৪০ শতাংশেরও বেশি। আবার ৮টি কোম্পানিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ারের পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার লঙ্ঘন বলে ধরা হচ্ছে।

যেসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ৪০%+

১। বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (BGIC): প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ৪৭.২৬%। উদ্যোক্তা ৩৩.৪০%, সাধারণ বিনিয়োগকারী ১৯.৩৪%। ২০২৪ সালে ১০% ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

২। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ ফাইন্যান্স (BIFC): প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ৪৩.২৭%। উদ্যোক্তা ৩৮.৩৫%, সাধারণ ১৮.৩৮%। ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।

৩। ইস্টার্ন ব্যাংক: প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ৪৩.৬২%। ২০২৪ সালে ১৭.৫% ক্যাশ ও ১৭.৫% স্টকসহ মোট ৩৫% ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

৪। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ৫৩.৯৯%। উদ্যোক্তা মাত্র ১৫.৪৩%। ২০২২ সালে ১০% ডিভিডেন্ড দিয়েছে (৫% ক্যাশ ও ৫% স্টক)।

৫। জেএমআই হসপিটাল: প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ৪৩.৮৩%। উদ্যোক্তা ৩২.৩০%, সাধারণ ২৩.৮৭%। ২০২৪ সালে ১০% ক্যাশ ডিভিডেন্ড।

৬। মতিন স্পিনিং: প্রাতিষ্ঠানিক দখল ৪৫.০৩%। ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ ৫০% ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

৭। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (SIBL): প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ৬৯.৬৯%। ২০২৩ সালে ৫% ক্যাশ ও ৫% স্টক ডিভিডেন্ড দিলেও ২০২৪ সালে কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।

৮। সাউথইস্ট ব্যাংক: প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ৪০.৪২%। ২০২৩ সালে ৬% ক্যাশ ও ৪% স্টকসহ ১০% ডিভিডেন্ড। ২০২৪ সালে ডিভিডেন্ড দেয়নি।

যেসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের মালিকানা ১০% এর নিচে

বিএসইসির নীতিমালায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে ৩০% শেয়ারধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নিম্নোক্ত কোম্পানিগুলো তা রক্ষা করছে না:

১। সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস: উদ্যোক্তার শেয়ার মাত্র ৭.৬৭%। সাধারণ বিনিয়োগকারী নিয়ন্ত্রণে ৮৬.১৩%।

২। সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল: উদ্যোক্তা ৭.১০%, সাধারণ ৮২.৮৬%।

৩। ফ্যামিলি টেক্স: উদ্যোক্তা মাত্র ৪.০২%। প্রাতিষ্ঠানিক ১৮.৪১%, সাধারণ ৭৭.৫৭%।

৪। ফু-ওয়াং ফুডস: উদ্যোক্তা ৭.৮৫%, প্রাতিষ্ঠানিক ৮.৭৮% এবং সাধারণ ৮৩.৩৬%।

৫। ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক: উদ্যোক্তা মাত্র ৫.৯০%। সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৬৪.১৪% শেয়ার।

৬। আইএফআইসি ব্যাংক: উদ্যোক্তা শেয়ার ০.০০%। সরকার ৩২.৭৫% এবং সাধারণ ৫.২৭%।

৭। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (SIBL): উদ্যোক্তা ১১.৬২% হলেও মূল নিয়ন্ত্রণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।

৮। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ: উদ্যোক্তা মাত্র ০.১৮%। প্রাতিষ্ঠানিক ৭৪.৮২% এবং বিদেশি ১৭.৮৯%।

এস আলম গ্রুপের শেয়ার দখল ও পতন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ, এসআইবিএল ও ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের মালিকানার প্রভাব ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ও আদালতের আদেশে এস আলমের পরিচালকের পদ বাতিল হওয়ায় তার শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হিসেবে গণ্য হয়েছে। এতে উদ্যোক্তা শেয়ারের পরিমাণ কমে যায় এবং কোম্পানিগুলোর মালিকানার কাঠামো নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়।

বিশ্লেষণ ও বার্তা

বর্তমানে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে বেড়েছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা এনে দিতে পারে। তবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর ওপর উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হচ্ছে, যা পরিচালন কাঠামোর ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। একই সঙ্গে বিএসইসি’র নীতিমালা অমান্য করায় এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে তদারকি জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে।