“গাছ কাটা নয়, যেন এক গণহত্যা! বাবুই পাখির ছানাহত্যায় নড়ে উঠেছে আইন”

ঝালকাঠির সদর উপজেলায় একটি প্রাচীন তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ধ্বংস ও অসংখ্য ছানা হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়। পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘনে বন বিভাগ ও থানা পুলিশ পৃথক দুটি মামলা করেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন গ্রামে মোবারেক আলী ফকিরের জমির পাশের বিশাল একটি তালগাছ বহু বছর ধরে বাবুই পাখির একমাত্র প্রজনন ও আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। গাছটি সম্প্রতি মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন মোবারেক। পরে শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে গাছটি কেটে ফেলা হয়।

সাক্ষীদের ভাষ্যমতে, তালগাছ কাটার সময় স্থানীয়রা আপত্তি জানান, তবে গাছ ক্রেতা সে অনুরোধ আমলে নেননি। তালগাছের গায়ে থাকা শতাধিক বাবুই পাখির বাসা, ডিম ও অর্ধশতাধিক ছানা মুহূর্তেই মারা পড়ে। এমন নির্মমতা দেখে কেউ কেউ চোখের পানি লুকাতে পারেননি।

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ঝালকাঠি বন বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। বরিশালের উপ-অঞ্চলীয় বন সংরক্ষক মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী জানান, “ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০-এর আলোকে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছি।”

অন্যদিকে ঝালকাঠি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, “তালগাছ কাটার অপরাধে থানায় একটি পৃথক মামলা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা আত্মগোপনে রয়েছেন।”

ঝালকাঠি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, “বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। বাবুই পাখির বাসা ও প্রজনন ধ্বংস করে পরিবেশ আইনের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

প্রকৃতির নির্মল ভারসাম্য রক্ষায় বাবুই পাখির মতো পাখিদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ এক মুহূর্তের অসচেতনতায় ধ্বংস করা হয়েছে একটি প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থল ও প্রাণের আবাসভূমি। এ ঘটনা শুধু একটি পরিবেশ আইনের মামলাই নয়, বরং মানবতার এক গভীর প্রশ্নও তুলে ধরেছে।