যে কারণে সরকারকে দায়ী করলেন নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ না হওয়া ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বিষয়ে সরকারকে দায়ী করে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনো সরকার কর্তৃক ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়ায় এ ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানান, স্পষ্ট করে বলতে হবে কোথা থেকে বাধা আসছে এবং কোন রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ দলিল বাস্তবায়নে অবহেলা হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয়, সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে শুধু বসে থাকা উচিত নয়। বরং আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং জনগণের কাছে পৌঁছে এ দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকার অবশ্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্ব পালন করবে। তবে এর আগে জনগণের মতের স্বরূপ এই দলিলের চূড়ান্তকরণ ও প্রকাশ জরুরি।”

তিনি আরও জানান, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের দাবিতে এনসিপি একটি কর্মসূচি শুরু করেছিল, যা সরকার যখন প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন দলটি ওই কর্মসূচি থেকে সরে আসে। তবে এখন পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় পুনরায় কর্মসূচি চালিয়ে যায় তারা। এই কর্মসূচির আওতায় তারা সারাদেশে যাত্রা শুরু করবে, যেখানে সাধারণ জনগণের কাছে গিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা ও দাবির ভিত্তিতে দলিলটি রচনার কাজ সম্পন্ন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মো. নাহিদ ইসলাম আগামী ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এই মাসব্যাপী পদযাত্রার উদ্বোধন হবে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে। একই সময়ে দেশের ৬৪টি জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, আহতদের খোঁজখবর নেবেন এবং জনসাধারণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপন করবেন। ৩০ জুলাই কর্মসূচির সমাপ্তি হবে ঢাকায়।

এছাড়া ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের শাহাদত দিবস হিসেবে পালন করা হবে, যা ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত হবে। এই দিন শহিদদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ৫ আগস্ট দলটি ‘ছাত্র জনতার মুক্তি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, যা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের প্রতীক হিসেবে গণ্য। এই দিনটি সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক ৩৬ দিন বাংলাদেশের জন্য একটি নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমাদের দেশের মানুষের মনে গভীরভাবে গেঁথে থাকা উচিত। আমরা চাই, এই গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ এবং আকাঙ্ক্ষা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক।”

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে পদযাত্রা কর্মসূচির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়কে সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এছাড়া দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ কর্মসূচির মাধ্যমে এনসিপি সরকারের ব্যর্থতা ও অবহেলা তুলে ধরে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। দলটি আশা করছে, দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করে দেশের উন্নয়ন, সমতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে একজোট হবে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক