পাবনা মানসিক হাসপাতাল: এনএসআই অভিযানে দালালচক্র ধরা

পাবনা মানসিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা দালাল চক্রের বিরুদ্ধে রোববার (২৯ জুন) সকালে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযানে হাসপাতালের বহির্বিভাগ এলাকা থেকে ৯ জন দালালকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছে।

সকাল ১০টার দিকে শুরু হওয়া এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুরাদ হোসেন। এনএসআই থেকে পাওয়া গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানসিক চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের নানা কৌশলে হয়রানি ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলছিল এই দালাল চক্র।

এনএসআই এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতরা হাসপাতালের মূল ফটক ও বহির্বিভাগের আশপাশে অবস্থান করে রোগীদের চিকিৎসার নামে নানা ভুয়া পরামর্শ দিয়ে প্রভাবিত করত। কখনো হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা, কখনো রোগ নির্ণয়ের সুবিধা কিংবা দ্রুত চিকিৎসা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আদায় করত তারা। এদের অনেকেই স্থানীয়ভাবে পরিচিত চাঁদাবাজ ও দালাল হিসেবে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন— মো. মুকাররম (৫০), জহুরুল ইসলাম (৪২), মো. হালিম (৪০), মানিক মণ্ডল (২৪), মো. শফিকুল (৫৫), ছাবিত (১৯), মো. মুন্নাফ (৩১), জুয়েল রানা (৩০) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলমগীর হোসেন (৩৫)।

অভিযান পরিচালনার সময় এই ৯ জনকে সরাসরি রোগীদের সঙ্গে লেনদেনে জড়িত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সবাইকে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে হেমায়েতপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তারিকুল ইসলাম জানান, “আমরা এনএসআই থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সহযোগিতা করেছি। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদেরকে দণ্ড দেন। এখন পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হবে।”

এই অভিযানের মাধ্যমে প্রশাসন দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। একইসঙ্গে দেশের অন্যতম বৃহৎ মানসিক হাসপাতালটি রোগীদের জন্য নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত রাখতে প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

পাবনা মানসিক হাসপাতালটিকে দালালমুক্ত রাখতে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের তালিকা তৈরি করে আরও বড় পরিসরে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।