এনসিপির মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা, যা থাকছে

‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শিরোনামে ৬৪টি জেলায় এই কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে দলটি। রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার (২৯ জুন) এ ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।

তিনি জানান, এই কর্মসূচির সূচনা হবে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে। এরপর দেশের প্রতিটি জেলা শহরে স্থানীয় কর্মীদের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এই পদযাত্রাকে দলটি স্বাধীনতা, সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, “১৬ জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যুর মাধ্যমে শহীদ হওয়া শুরু হয়েছিল। এই দিনটি আমাদের কাছে প্রতীকী এবং বাস্তবতা উভয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই দিনটিকে আমরা ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করব।”

তিনি দাবি করেন, এই দিবসের স্বীকৃতি ও তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পালন না করায় বর্তমান সরকার ইতিহাস বিকৃতির পথে হেঁটেছে। এনসিপি এখন থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে স্মরণে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান তিনি।

এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হবে। একই সঙ্গে সেখানে একটি রাজনৈতিক ইশতেহারও ঘোষণা করা হবে, যা দলটির ভবিষ্যৎ রূপরেখা ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বহন করবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছি জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তারা ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায়ভার আমরা নিচ্ছি না। আমরা নিজেরাই আগামী দিনের জন্য নতুন পথ দেখাবো।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক দাবি করেন, “৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। আমরা এই দিনকে ‘ছাত্রজনতার মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করবো। এটি প্রতীকী দিন, যেটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র-তরুণদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব বহন করে।”

প্রসঙ্গক্রমে সরকার ঘোষিত ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “৮ আগস্টকে কেন্দ্র করে সরকার যেভাবে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তা বিভ্রান্তিকর। আমরা চাই সরকার এই ‘দিবস রাজনীতি’ থেকে সরে আসুক। মানুষের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো উচিত ক্ষমতাসীনদের।”

এনসিপির ঘোষিত কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট যে, তারা জুলাই অভ্যুত্থানকে কেবল ইতিহাসের একটি মুহূর্ত হিসেবে নয়, বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে স্থাপন করতে চায়। সরকার ও প্রচলিত রাজনীতির প্রতি দলটির প্রতিবাদী অবস্থান এবং বিকল্প ইশতেহার প্রদানের ঘোষণা আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচনার জন্ম দিতে পারে।