আওয়ামী লীগ নিয়ে বিষ্ফোরক মন্তব্য নাগরিক ঐক্যর

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যে নির্যাতন, গুম ও হত্যার রাজনীতি চালিয়েছে, তার কোনো ক্ষমা নেই এমন মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এসব অপরাধের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তিনি শেখ হাসিনাকে ‘কুৎসিত স্বৈরাচার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ আর কখনও গণমানুষের সামনে একটি সুস্থ্য রাজনৈতিক ন্যারেটিভ নিয়ে ফিরে আসতে পারবে না।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) আয়োজিত ‘ক্ষমতার পালাবদলে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মান্না বলেন, “জুলাইয়ের চেতনা আমাদের হৃদয়ে আগুন ধরিয়েছে। সেই আগুন মশালের মতো জ্বলবে। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে এই পরিবর্তনের সূচনা হবে।” তিনি আরও বলেন, যেসব তরুণ অতীতে অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা আজ রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও এখনো জনগণের কাছে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারেননি। তাদের আরও ঐক্যবদ্ধ এবং পরিণত রাজনৈতিক আচরণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন মান্না।

তিনি বলেন, “এক সময় মানুষ সন্দেহ করত এই দেশে আদৌ নির্বাচন হবে কি না। কিন্তু এখন মানুষ বিশ্বাস করছে, ভোট হবে। রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে সব দল শুরুতে ঐকমত্যে না এলেও এখন সবাই ধীরে ধীরে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।” মান্না মনে করেন, আগামী যে সরকারই গঠিত হোক না কেন, তাদেরকে ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা’ ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনায় এগিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা পালিয়ে গেছেন। ফলে দলটি এখন গভীর নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, “নির্বাচন কমিশনসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার দায় আওয়ামী লীগেরই।”

কিরণ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য ১০টি সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে:

- নির্বাচনী অপরাধে জড়িত পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

- নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও সন্ত্রাস দমন

- গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত

- আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি ও স্বচ্ছ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতকরণ

ছায়া সংসদে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিতার্কিকদের মধ্যে ইডেন মহিলা কলেজের দল চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্য এবং কিরণের পর্যবেক্ষণ দেশজুড়ে বিরোধী মতের মধ্যকার একটি স্পষ্ট আস্থাবোধের ইঙ্গিত দেয় বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক শক্তির পুনর্গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে। একই সঙ্গে এটি নির্দেশ করে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনমতের চাপ বাড়ছে, এবং যে কোনো রাজনৈতিক দলকে এখন জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক