ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় আসছে নতুন আইন

নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার 'পারসোনাল ডেটা প্রটেকশন আইন' নামে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। একইসঙ্গে তথ্যের অপব্যবহার ঠেকাতে গঠিত হতে যাচ্ছে ‘ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি’। এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-তে আয়োজিত এক সেমিনারে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি–প্রকৃতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য, বিশেষ করে যে তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব, তা ‘পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন ইনফরমেশন (PII)’ হিসেবে চিহ্নিত করে ক্লাসিফিকেশন করা হচ্ছে। এই তথ্যসমূহ যেন বিদেশে চলে না যায়, সে লক্ষ্যে দেশীয় সার্ভারে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে।

PII-এর আওতায় থাকা গোপনীয় তথ্য, যেমন স্বাস্থ্য রেকর্ড ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ডেটা, নির্ধারিত শর্তে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ব্যবহার করা যাবে। তবে এসব তথ্য দেশের বাইরে স্থানান্তর কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। অপরদিকে, ছবি, ভিডিও বা অডিওসহ অন্যান্য তুলনামূলকভাবে কম সংবেদনশীল উপাত্ত স্টোরেজের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নমনীয়তা থাকবে, তবে এসব ডেটারও উপযুক্ত ম্যাপিং ও শ্রেণিবিন্যাস নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি হওয়া কনটেন্টকে সাইবারস্পেসের আওতায় এনে ‘সাইবার সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স’-এর মাধ্যমে আইনের কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে AI দ্বারা প্রস্তুত যেকোনো ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট এখন সাইবার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে পিআইবির পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “গত ১৫ বছরে রাষ্ট্র নিজেই মিথ্যার কারখানায় রূপ নিয়েছে, যেখানে সংবাদমাধ্যমও অনেকাংশে সেই মিথ্যার সহযোগী ছিল। শুধু ফ্যাক্টচেক দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। অপতথ্যের বিরুদ্ধে একটি সর্বজনীন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”

সেমিনারে মূল গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ‘ইবিএলআইসিটি’ প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশিদ। তিনি বলেন, বাংলা ভাষায় ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ যেমন জরুরি, তেমনি অপতথ্য নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় ভাষাভিত্তিক ডেটা বিশ্লেষণ এবং AI মডেলের উন্নয়ন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক