তেহরানে আবার ভোররাতে বিস্ফোরণ

ইরানের রাজধানী তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে শনিবার (২৮ জুন) ভোররাতে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তা বলয়। ঘটনায় দ্রুত সক্রিয় করা হয় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এমন একটি সময়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে নিহত ৬০ জন উচ্চপদস্থ সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হচ্ছে।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে লন্ডনভিত্তিক ইরান ইন্টারন্যাশনাল এবং ইরানি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের তথ্য অনুযায়ী, বিস্ফোরণের উৎস ছিল তেহরানের ইসলামশহর এবং বিদগানে এলাকা। বিদগানে অঞ্চলটি ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক ১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সীমিত যুদ্ধের সময় এই এলাকাই একাধিকবার হামলার টার্গেটে পরিণত হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় দেখা গেছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট গানের আওয়াজ শোনা যায় এবং কোথাও কোথাও আলোর ঝলকানি দেখা যায়, যা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিফলন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইরানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, এটি হয় একটি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহতের অংশ, কিংবা কোনো সামরিক মহড়ার অনুশীলন। তবে সময় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটি শুধুই মহড়া ছিল এমন ধারণা অনেকেই নাকচ করে দিয়েছেন।

অন্যদিকে, একই দিন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে একটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়, যা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের একাধিক অঞ্চলে সতর্কতা সংকেত (সাইরেন) বাজানো হয় এবং নাগরিকদের স্বরাষ্ট্র কমান্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়।

এই বিস্ফোরণ এবং নিরাপত্তা তৎপরতা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব এখনো শীতল হয়নি, বরং নানা মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিহত ৬০ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রাক্কালে এই ধরনের হামলা বা নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, কৌশলগত বার্তা বহন করে।

ইরান ও ইসরায়েলের উত্তেজনা কেবল সীমান্ত বা অঞ্চলভিত্তিক নয় এটি এখন ভূরাজনৈতিক সংঘাতের একটি গভীর স্তরে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক