এক ফুলেই উত্তাল গ্রাম, পুলিশের ৭ জন আহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে কবরস্থানের ফুল ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে দুর্গাপুর ইউনিয়নের এই গ্রামে সংঘর্ষ শুরু হলে মুহূর্তেই তা রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। ঘটনাস্থলে দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুর ছাড়াও একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রাতভর তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১০-১৫ দিন আগে মহাজনবাড়ি ও সরকারবাড়ির তরুণদের মধ্যে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। যদিও সে সময় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে একই দুই পক্ষের তরুণদের মধ্যে ফের ফুটবল ম্যাচ চলাকালে একটি নতুন উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। খেলাকালীন সময় সরকারবাড়ির ফাইজুর রহমানের ছেলে আসিফুর রহমান মাঠের পাশের কবরস্থান থেকে একটি ফুল ছেঁড়ে। এতটুকুই যেন ছিল আগুনে ঘি ঢালার মতো। মুহূর্তেই মহাজনবাড়ির ছেলেদের সঙ্গে আসিফের কথাকাটাকাটি শুরু হয়, যা রূপ নেয় হাতাহাতিতে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাজনবাড়ির পক্ষে মোল্লাবাড়ি ও আছিরের বাড়ির লোকজন এবং সরকারবাড়ির পক্ষে জাকির মিয়ার বাড়ির লোকজন সংঘর্ষে অংশ নেন। হাতে ছিল ছুরি, দা, টেঁটা, বল্লম, লাঠিসোঁটা—সবই। দুই পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন তাজুল ইসলাম ও মোয়াজ্জেম হোসেন। সংঘর্ষ চলাকালে বহু দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সরকারবাড়ির একটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের কঠিন সময় পার করতে হয়। পরে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষে পুলিশের সাত সদস্য আহত হন এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে একটি পুলিশ পিকআপ ভ্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আশুগঞ্জ থানার ওসি মো. খাইরুল আলম জানান, কবরস্থানের পাশে ফুটবল খেলা চলাকালীন এক তরুণ ফুল ছেঁড়াকে কেন্দ্র করেই পুরো উত্তেজনার সূত্রপাত। গ্রামটির পশ্চিমপাড়া ও পূর্বপাড়ার কয়েকটি গোষ্ঠী এই ঘটনায় জড়িত ছিল। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ থানায় কোনো মামলা দায়ের করেনি।

—সত্য প্রতিদিন/আশিক