হিজরি নববর্ষে কাবার গায়ে নতুন সাজ

পবিত্র কাবার গায়ে নতুন গিলাফ পরানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সৌদি আরব। হিজরি ১৪৪৭ সালের আগমন উপলক্ষে এই ঐতিহাসিক রীতি অনুসরণ করে বৃহস্পতিবার রাতেই শুরু হবে গিলাফ পরিবর্তনের কাজ। সৌদির গ্র্যান্ড মসজিদ এবং মসজিদে নববীর দায়িত্বে থাকা জেনারেল প্রেসিডেন্সির তত্ত্বাবধানে এটি সম্পন্ন হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও হিজরি নতুন বছরের প্রথম প্রহরেই নতুন কিসওয়া কাবাঘরের গায়ে পরানো হবে। গালফ নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার ২৯ জিলহজ আসরের নামাজের পর পুরোনো গিলাফ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে এবং বৃহস্পতিবার ১ মুহাররম রাতেই কাবাকে পরানো হবে নতুন গিলাফ। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে নিখুঁত সূচিকর্মে নির্মিত এই গিলাফটি প্রস্তুত করা হয়েছে মক্কার উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর হোলি কিসওয়ায়। এখানে কাবার গিলাফ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ৭০০ কেজি রেশমি সুতা, ২৫ কেজি রুপার সুতা এবং ১২০ কেজি খাঁটি সোনার সুতা। ঐতিহ্য অনুযায়ী এই গিলাফ তৈরি হয় সাতটি ধাপে—যার মধ্যে রয়েছে রেশম পরিশোধন, রং করা, বয়ন, জ্যামিতিক নকশা, সূচিকর্ম ও পরীক্ষা। নতুন গিলাফের ওজন প্রায় ১,৪১৫ কেজি। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৭টি সূক্ষ্ম রেশমের টুকরো এবং খোদাই করা হয়েছে ৬৮টি কোরআনের আয়াত। রুপালি সুতা এবং ২৪ ক্যারেট সোনার সুতা দিয়ে করা হয়েছে অলংকরণ। কাবাঘরের গিলাফ শুধু একখণ্ড কাপড় নয়—এটি ইসলামের গর্ব, ইতিহাস ও শিল্পসৌন্দর্যের এক অনন্য প্রতীক। একসময় এই গিলাফ হজের দিন পরিবর্তন করা হতো, তবে বর্তমানে সৌদি কর্তৃপক্ষ ১ মহররম হিজরি নববর্ষের প্রথম প্রহরকেই এই পবিত্র রীতির জন্য নির্ধারণ করেছে। কালো কাপড়ে সোনালি রেশম সুতায় দক্ষ কারিগরদের ক্যালিগ্রাফি ও সূচিকর্মে সাজানো হয় এই গিলাফ, যেখানে প্রতিটি মিটারে প্রায় ৯,৯০০ সুতার ব্যবহার হয়। প্রথমে কালির সাহায্যে আউটলাইন দেওয়া হয়, পরে তা ভরাট করা হয় রেশমের মোটা সুতা দিয়ে এবং সোনার সুতায় হরফগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। গিলাফ তৈরির প্রতিটি ধাপই সুপরিকল্পিত, নিখুঁত ও গভীর ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতায় পূর্ণ।