নির্বাচন নিয়ে সরাসরি যে ঘোষণা দিল আমীর খসরু

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলের ইঙ্গিত মিলছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবার সরাসরি ঘোষণা দিল, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের দিকে জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই বার্তা দেন।

আমীর খসরু বলেন, “নির্বাচনের দিকে আমরা সবাই নিশ্চিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। জাতি এগিয়ে যাচ্ছে, এবং সেটা ঐক্যবদ্ধভাবে হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা দেশের জনগণের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে।

নির্বাচন কমিশনের শিডিউল ঘোষণা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সাধারণত মনোনয়ন, বাছাই, ও ভোটগ্রহণের তারিখ নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে নির্ধারিত হয়। অতীতে সব নির্বাচনেই এ রকম হয়েছে। তাই আমাদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে, তবে গতিপথ একেবারে পরিষ্কার।”

বিএনপির এই নেতা মনে করেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অস্বচ্ছতা কাটিয়ে এখন পুরো জাতি “নির্বাচনী টানেলে” প্রবেশ করেছে। তার ভাষায়, “জনগণের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ও হতাশা ছিল, তা কেটে গেছে। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।”

বৈঠকে উপস্থিত গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন বলেন, “১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। ৫ আগস্ট সেই সরকারের পতন ঘটেছে এখন আমাদের সামনে একটি নতুন সুযোগ এসেছে, মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার।”

এ সময় গণফোরামের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, সুরাইয়া বেগম, মুসতাক আহমেদ ও সেলিম আকবর। দলটি বিএনপির সঙ্গে সমন্বয়ে আগাম নির্বাচনের পরিবেশ গঠনে কাজ করছে বলে জানিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর এমন সরাসরি নির্বাচনী প্রস্তুতির ঘোষণা দেশের রাজনীতিকে একটি নতুন গতিপথে ঠেলে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত নির্বাচনবিমুখ বা আন্দোলননির্ভর অবস্থান থেকে সরে এসে এখন দলগুলো ‘প্রক্রিয়াগত গণতন্ত্র’-এর দিকে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা থাকলেও রাজনৈতিক ঐকমত্য, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং গণআন্দোলনের চাপের ফলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা জোরদার হচ্ছে।

বিএনপি ও তাদের মিত্রদের ভাষায়, বাংলাদেশ এখন ‘নির্বাচনের পথে’। রাজপথের লড়াই শেষে ব্যালটের মাঠে ফেরার ঘোষণা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্ম দিচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি কেবল একটি তারিখ নয় এটি হতে পারে একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা। এখন দেখার বিষয়, এ অগ্রযাত্রা কতটা শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক হয়।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক