সরকারের 'বিশেষ সুবিধা' যারা পেতে যাচ্ছেন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য ঘোষিত ‘ন্যূনতম বিশেষ সুবিধা’ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত আর্থিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় জীবনযাত্রার ব্যয় সামাল দিতে সরকারি পর্যায়ে একটি সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রোববার (২৩ জুন) রাজধানীতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার যৌথভাবে এই ঘোষণা দেন।

ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী জুলাই মাস থেকেই এই বাড়তি সুবিধা কার্যকর হবে। কর্মরত সরকারি কর্মচারীরা পাবেন মাসিক ১,৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীরা পাবেন ৭৫০ টাকা করে বিশেষ ভাতা। এর আগে এই সুবিধার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১,০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, উভয় ক্ষেত্রেই প্রায় ৫০ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে এই ভাতা।

অর্থসচিবের ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ঘোষিত প্রজ্ঞাপনের একটি সংশোধিত সংস্করণ শিগগিরই জারি করা হবে, যাতে পরিষ্কারভাবে নতুন হার, প্রাপ্যতা ও প্রক্রিয়া নির্ধারিত থাকবে।

এই সুবিধা সমস্ত সরকারি কর্মচারীর জন্য প্রযোজ্য হলেও কিছু শর্ত এবং ব্যতিক্রম রয়েছে:

তারা তাদের অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার আগে প্রাপ্ত মূল বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত গ্রেড অনুযায়ী বিশেষ সুবিধা পাবেন।

যারা পুরো পেনশনের অর্থ এককালীন উত্তোলন না করে আংশিক পেনশন গ্রহণ করছেন, তারাই এই বাড়তি সুবিধার আওতায় থাকবেন। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ পেনশন সমর্পণ করে শুধুমাত্র এককালীন আনুতোষিক গ্রহণকারীরা এই সুবিধার যোগ্য হবেন না।

যারা সরকারি অনুমতিপত্র ছাড়া অথবা দীর্ঘমেয়াদি বেতনবিহীন ছুটিতে আছেন, তারাও এই ভাতা পাবেন না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান অর্থনৈতিক চাপ ও নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যের প্রেক্ষাপটে সরকার এই ভাতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত আয়ের সরকারি কর্মচারীদের কিছুটা সুরাহা দিতে চাইছে। যদিও এ বৃদ্ধির পরিমাণ বড় আকারে নয়, তবুও এটিকে সরকারি মনোভাবের একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সরকার আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কর্মচারীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি রাখছে। আমরা এই সুবিধাকে ধাপে ধাপে আরও উন্নত করার চেষ্টা করব।”

প্রজ্ঞাপনের সংশোধিত আদেশ জারি হলে কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা তা তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানতে পারবেন। অর্থ বিভাগ এক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টাল চালুর কথাও বিবেচনা করছে, যাতে সুবিধাভোগীরা সহজে আপডেট পেতে পারেন।

এই সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের আর্থিক নীতির একটি মানবিক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। যদিও ভাতা বৃদ্ধির পরিমাণ সীমিত, তথাপি এটি সরকারি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। একইসঙ্গে এটি ইঙ্গিত দেয়, সরকার জাতীয় বাজেটের কাঠামোয় জনগণের সরাসরি কল্যাণ সংশ্লিষ্ট খাতকে গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কাঠামোগত ও টেকসই সংস্কার আশা করা হচ্ছে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক