২২ জুন শেয়ারের দর কমেছে যেসব কোম্পানির

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (২২ জুন) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এ বিনিয়োগকারীদের জন্য দিনটি ছিল হতাশাজনক। বাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬৫টি কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে, যা একক দিনে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় দরপতনের নজির বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ডিএসই সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাজারে এমন ব্যাপক দরপতন স্বল্পমেয়াদী আতঙ্ক নয়, বরং এটি বাজারে চলমান আস্থার সংকট এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তাহীনতারই প্রতিচ্ছবি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি হতাশাজনক মনোভাব কাজ করছে। একদিকে যেমন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বড় কোনো বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, অন্যদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও পুঁজির সুরক্ষার চিন্তায় শেয়ার বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন।

প্রাইম ফাইন্যান্স: সর্বোচ্চ দরপতনকারী

দিনটিতে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪০ পয়সা, যা শতাংশ হিসেবে ১০.০০ শতাংশ পতন। ফলে এটি ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে।

এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে আকস্মিক এ পতনের পেছনে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট ও আর্থিক প্রতিবেদন ঘিরে অনিশ্চয়তা কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও পদ্মা ইসলামী লাইফ

দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স, যাদের শেয়ার দর কমেছে ৪০ পয়সা বা ৯.৫২ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যাদের শেয়ার দর কমেছে ১ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯.৫০ শতাংশ। বিমা খাতভুক্ত এই কোম্পানিটির ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি এবং নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এর পেছনে প্রভাব ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দরপতন

এছাড়া দরপতনের শীর্ষ তালিকায় আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে, যাদের শেয়ার দর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে-

বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট: দরপতন ৯.৩০%

খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং: দরপতন ৮.২৪%

ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট: দরপতন ৮.১১%

বিডি ফাইন্যান্স: দরপতন ৭.৮৯%

এএফসি এগ্রো বায়োটেক: দরপতন ৭.৫৯%

সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল: দরপতন ৭.৩২%

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ফাইন্যান্স, ম্যানুফ্যাকচারিং ও ক্যাপিটাল মার্কেট-সংশ্লিষ্ট, যাদের আয়ের প্রবাহ ও বাজারে গ্রহণযোগ্যতা সম্প্রতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

বাংলাদেশ স্টক ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (BSBA)-র এক সিনিয়র সদস্য বলেন, "এটা শুধু এক দিনের দরপতন নয়। আমরা দেখছি সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে পড়েছে। পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের সংস্কার, শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ছাড়া এ ধরনের পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।"

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তিহীন শেয়ারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এবং সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃষ্টিও দুর্বল। এখনই সময় কার্যকর নীতিগত হস্তক্ষেপের।”

বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতা

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে হঠাৎ করে শেয়ার বিক্রি করে প্যানিক তৈরি করা উচিৎ নয়। বরং, মৌলভিত্তি মজবুত এবং দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক সম্ভাবনা রয়েছে এমন কোম্পানির শেয়ারে স্থির থেকে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

এক দিনের দরপতন বড় ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব যদি বাজারে সঠিক মনিটরিং, প্রণোদনা এবং স্বচ্ছতা বজায় থাকে। তবে টানা দরপতন বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই বাজার-পরিস্থিতি এখন গভীর পর্যবেক্ষণ ও শক্ত নীতিগত সিদ্ধান্তের দাবি রাখে।