জিপিএইচ ইস্পাতের ৫০০ কোটি টাকা প্রেফারেন্স শেয়ার প্রস্তাব বাতিল

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটি রিডিমেবল, কিউমুলেটিভ, নন-কনভার্টেবল এবং নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে এই অর্থ তুলতে চেয়েছিল মূলত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে।

প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রথম এ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়, যেখানে প্রস্তাবটি কার্যকর করতে শেয়ারহোল্ডার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মতির প্রয়োজন ছিল। তবে গত সপ্তাহে একটি মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যের মাধ্যমে কোম্পানিটি জানায়, বিএসইসি তাদের প্রস্তাবটি অনুমোদন দিচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বিএসইসি প্রস্তাবের বিশ্লেষণে সন্তুষ্ট হয়নি। যদিও প্রেফারেন্স শেয়ার মূলধন সংগ্রহের একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত, তথাপি এর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, প্রাসঙ্গিক আর্থিক পরিসংখ্যান এবং প্রস্তাবিত ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রয়োজন হয়।

প্রেফারেন্স শেয়ার, সাধারণ শেয়ারের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন; এগুলোর মাধ্যমে মালিকানা প্রদান করা হয় না এবং ইপিএস (শেয়ার প্রতি আয়)-এও অন্তর্ভুক্ত হয় না। তবে ডিভিডেন্ড ও দেউলিয়তার ক্ষেত্রে প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা অগ্রাধিকার পান।

জিপিএইচ ইস্পাতের সাম্প্রতিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে কোম্পানির মোট রাজস্ব আয় ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা হলেও নিট মুনাফা ৫৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩ কোটি ৩ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।

উৎপাদন ব্যয় ও সুদের হার বৃদ্ধির ফলে কোম্পানির নিট লাভ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় প্রভাব ফেলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০২৫ সালের মে মাসে বিএসইসি জিপিএইচ ইস্পাতের রাইটস শেয়ার ইস্যুর আবেদনও বাতিল করে দেয়। কোম্পানিটি বিদ্যমান প্রতিটি তিনটি শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইটস শেয়ার ১৫ টাকা মূল্যে ইস্যু করে ২৪২ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল। তবে বিএসইসি জানায়, দাখিলকৃত কাগজপত্র ও আর্থিক বিশ্লেষণ যথাযথ নয় এবং বিবেচনার পর প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।

জিপিএইচ ইস্পাত জানিয়েছিল, রাইটস শেয়ারের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ একটি নতুন উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন এবং বার্ষিক ৪৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবহার করার কথা ছিল।

দুই দফা মূলধন উত্তোলনের প্রস্তাব বাতিল হওয়ায় জিপিএইচ ইস্পাতের আর্থিক পুনর্গঠনের পরিকল্পনায় বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন কোম্পানির সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ

- ঋণের বোঝা হালকা করা

- লাভজনকতা ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা

জিপিএইচ ইস্পাতের সামনে বিকল্প হিসেবে বন্ড ইস্যু, কৌশলগত অংশীদারিত্ব বা অভ্যন্তরীণ খরচ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফেরানোর পথ খোলা থাকতে পারে। তবে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে নির্ভুল আর্থিক কৌশল ও পরিচালনার স্বচ্ছতা।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক