ভোট ২০২৬-এর আগে? ইসি প্রস্তুত, অপেক্ষা শুধু সিদ্ধান্তের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্ধারিত সময়ে ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচনী আইনের সংশোধনী থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি—সব কিছুই এখন পুরোদমে চলছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, "নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই করার জন্য আইনি ও প্রক্রিয়াগত সব প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে, আরও কিছু সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।"

এদিকে গত ১৫ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনার কাজ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “কোন কাজ কবে শুরু হবে এবং কবে শেষ হবে তা নির্ধারণ করেই এগোচ্ছি। নির্বাচন ঘিরে সময়মতো তফসিল ঘোষণা করা হবে।”

কমিশন সূত্র জানায়, ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ৩০ জুনের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৭৬টি সংসদীয় আসনে সীমানা পুনঃনির্ধারণ প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ৬৩৮টি আবেদন। এই কাজ শেষ হতে পারে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই।

এ ছাড়া আচরণ বিধিমালার খসড়া ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। নতুন বিধিমালায় পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সংযোজিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্রচারণার বাধ্যবাধকতা এবং বিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার ধারা।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, স্ট্যাম্প, সিলসহ ১৭ ধরনের খাম ও উপকরণ প্রস্তুতের প্রক্রিয়া চলছে। ব্যালট পেপারের কাগজ সংগ্রহ করা হবে কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে এবং ছাপা হবে সরকারি ছাপাখানায়।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সময়সীমা ২২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৫টি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগেই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। পরে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে এই সম্ভাবনার পুনরুল্লেখ করেন তিনি।

লন্ডন বৈঠকের পর ইসি অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করে ২০২৬ সালের এপ্রিল বা তার আগেই ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রস্তাবনা ও সুপারিশের অপেক্ষায় আছে।