বিপদ-আপদ কি শুধুই শাস্তি? ইসলাম কী বলে

মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, মুসিবত, বিপদ-আপদ—সবই বাস্তবতা। এসব কখনো কখনো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে ইসলাম এসব পরিস্থিতিকে কেবল দুর্ভোগ বা শাস্তি নয়, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা।

বিপদে পরীক্ষার কথা কোরআনেপবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

“অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আসলে বলে— ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। এদের জন্য রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে অফুরন্ত অনুগ্রহ, দয়া এবং তারাই সুপথপ্রাপ্ত।”(সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৫৫-১৫৭)

ধৈর্য: গুনাহ মোচনের পথরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—

“মুসলমান ব্যক্তি যখন কোনো ক্লান্তি, রোগ, চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট অথবা কাঁটা বিদ্ধ হওয়ার মতো ছোট্ট কষ্টে পড়ে, তখন আল্লাহ তাআলা তার পাপ মোচন করে দেন।”(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৪২)

আরেক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একবার জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় বলেন—

“আমি তোমাদের চেয়ে দ্বিগুণ জ্বরে ভোগ করি। কারণ, এতে আমার জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান রয়েছে। যেকোনো মুমিন বিপদে পড়ে ধৈর্য ধারণ করলে, আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ এমনভাবে ঝরিয়ে দেন, যেমন গাছ থেকে শুকনো পাতা ঝরে পড়ে।”(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫২৪৫)

শর্ত সাপেক্ষে সওয়াবতবে মনে রাখতে হবে, মুসিবতের মাধ্যমে সওয়াব পাওয়ার জন্য চাই ধৈর্য, আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্টি, এবং তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কারের প্রত্যাশা। অর্থাৎ কেউ যদি বিপদে পড়ে মুখে অভিযোগ না করে বরং আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে বলেন—

“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”,তবে সেই মুমিন ব্যক্তি জান্নাতের দরজায় পৌঁছে যায়।

শাস্তিস্বরূপ মুসিবতও হতে পারেঅন্যদিকে, কিছু বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার গুনাহের পরিণাম হিসেবেও আসতে পারে। যেমন আল্লাহ বলেন—

“তোমাদের ওপর যে বিপদ এসেছে, তা তোমাদের কৃতকর্মের ফল; তবে তিনি অনেক কিছুই ক্ষমা করে দেন।”(সুরা শুরা, আয়াত: ৩০)