‘তাণ্ডব’ পাইরেসি: HD কপি ছড়িয়ে পড়ায় গ্রেপ্তার ৩, তদন্তে প্রেক্ষাগৃহ সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত!

মুক্তির পর থেকেই দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে শাকিব খান অভিনীত ও রায়হান রাফী পরিচালিত বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘তাণ্ডব’। শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া এ চলচ্চিত্রটি নিয়ে দর্শকমহলে উত্তেজনার শেষ ছিল না। টিকিট সংকট থেকে শুরু করে মাল্টিপ্লেক্সে অগ্রিম বুকিং—সব মিলিয়ে ‘তাণ্ডব’ ছিল চলতি সময়ের সবচেয়ে চর্চিত ও বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমা।

তবে এই সাফল্যের মাঝেই হঠাৎ নেমে আসে এক অপ্রত্যাশিত কালো ছায়া। সম্প্রতি জানা গেছে, ‘তাণ্ডব’ সিনেমার সম্পূর্ণ HD কপি বেআইনিভাবে ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গুরুতর পাইরেসির ঘটনায় দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন তথা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটিতে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে ‘তাণ্ডব’–এর অন্যতম প্রযোজক শাহরিয়ার করিম ভূঁইয়া (ওরফে শাহরিয়ার শাকিল) ঢাকার বনানী থানায় কপিরাইট আইনে মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার (১৮ জুন) দুপুর পৌনে ১২টায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন:

টিপু সুলতান (৩৫), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা, সাদি সাদ, ময়মনসিংহ জেলার অধিবাসী, সাজেদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা, যিনি সাভার থেকে আটক হন।

ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, টিপু সুলতান ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটি পাইরেসি করে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন, যা দেশের কপিরাইট আইন অনুযায়ী একটি গুরুতর অপরাধ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর মোহাম্মদিয়া হোটেলের নিকটবর্তী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পাইরেসির স্বীকারোক্তি ও বিচার প্রক্রিয়া

গ্রেপ্তারের পর টিপু সুলতান পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের দায় স্বীকার করেন বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তাঁকে ঢাকায় পাঠিয়ে কপিরাইট আইনে মামলা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, সাদি সাদকে গ্রেপ্তার করা হয় ময়মনসিংহ থেকে এবং সাজেদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে সাভার এলাকা থেকে। পুলিশ জানায়, এই তিনজনের মধ্যে কেউ না কেউ দেশের কিছু প্রেক্ষাগৃহ বা প্রদর্শন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া ও আগাম হুঁশিয়ারি

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, “তাণ্ডব”-এর পাইরেসির বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের জন্য শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ক্ষতি হিসেবেও বিবেচিত। পাইরেসি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিক্রিয়া

চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের মতে, পাইরেসি দেশের সিনেমা ব্যবসার জন্য মারাত্মক হুমকি। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যতে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।