ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে ডিসির চিঠি

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ভোক্তাদের নাগালে রাখতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) পাঠানো এই চিঠিতে তিনি ইলিশের মূল্য নির্ধারণে কেন্দ্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার মোহনার ইলিশ দীর্ঘদিন ধরেই স্বাদ, মান ও জনপ্রিয়তায় অনন্য। এই ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই ২০১৭ সালে সরকার চাঁদপুরকে ‘ইলিশের বাড়ি’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণ, বিশেষত চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দারাও এই মাছ ক্রয়ে অক্ষম হয়ে পড়ছেন।

জেলা প্রশাসক অভিযোগ করেন, অসাধু কিছু ব্যবসায়ী ও আড়তদার নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে বাজারে একপ্রকার সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন। ইলিশ আহরণে জেলেদের কোনো প্রকার উৎপাদন ব্যয় না থাকলেও বাজারে মাছের দাম অতিমাত্রায় বাড়ছে, যা সরাসরি সিন্ডিকেট-নিয়ন্ত্রিত।

চিঠিতে আরও বলা হয়, যেহেতু ইলিশ কেবল চাঁদপুরেই নয়, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলবর্তী বেশ কয়েকটি জেলায়ও আহরণ করা হয়, তাই চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের একক উদ্যোগে মূল্য নির্ধারণ বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় পরিসরে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ জরুরি, যাতে বাজারে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হয়।

তিনি আরও যুক্ত করেন, যেহেতু ইলিশ একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছ এবং এটি আহরণে জেলেরা নির্দিষ্ট খরচ বহন করেন না, তাই প্রকৃত সংগ্রহ ব্যয় ও পরিবহন ইত্যাদি আনুষঙ্গিক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবটি শুধু সচিবের নিকটই নয়, বরং এ বিষয়ে অবগতির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকেও অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন,

"চাঁদপুর ও আশপাশের জেলার অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, যা ভোক্তাদের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় স্বার্থে, জনগণের সুবিধার্থে, এবং ইলিশের সুনাম রক্ষার্থে মূল্য নির্ধারণ করা সময়ের দাবি। আশা করছি, মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।"

এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে জাতীয় মাছ ইলিশের বাজারব্যবস্থায় একটি নীতিগত হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি হলো, যা সিন্ডিকেট-নির্ভর মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক