২০২৬ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট প্রার্থী নিয়ে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি!

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে জোরালো গতিতে এগোচ্ছে বিএনপি। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে দলটি এখন থেকেই সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, ইতোমধ্যেই একাধিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে।

লন্ডনে দলের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর নির্বাচনের জন্য সন্তোষজনক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে প্রার্থী বাছাই এখন দলটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রতিটি আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী অসংখ্য প্রার্থী গণসংযোগ শুরু করেছেন। কিন্তু দলীয় হাইকমান্ড এখনো মনোনয়নের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে অনেক দফা জরিপ চালাচ্ছে।

জরিপের পাশাপাশি ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের পারফরম্যান্স ও বর্তমান অবস্থানও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। দল এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে যিনি ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জয়ী হতে সক্ষম। প্রার্থী মনোনয়নে তিনটি মূল মানদণ্ডের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে:

১. গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এবং দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা প্রার্থী,২. সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও এলাকার জনগণের কাছে সুপরিচিত,৩. নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা।

দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয় করে একটি শক্তিশালী প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়া শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্যরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এবং মিত্রদের জন্য কিছু আসন সমর্পণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ মনোনয়নও আসতে পারে।

বিএনপি গত ১৫ বছরে তিনটি জাতীয় নির্বাচন দেখেছে; এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৪ সালের নির্বাচন তারা বর্জন করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল দল। তৎকালীন নির্বাচনে একাধিক আসনে দলের একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিল, যা এবার এড়ানো হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ নিশ্চিত করেছেন, এবারের নির্বাচনে প্রতিটি আসনে শুধু একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে।

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র বিক্রয় ও জমার কাজ শুরু হবে। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের পর পার্লামেন্টারি বোর্ড একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে পার্লামেন্টারি বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা বলছেন, এবারের প্রার্থী মনোনয়নে চমক থাকতে পারে। অনেকে ভাবেননি এমন ব্যক্তিরাও প্রার্থী হতে পারেন, আবার সিনিয়র ও প্রভাবশালী অনেক নেতাই টিকিট পাবেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী, সৎ ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে মনোযোগী, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে এবং যারা মাঠে গ্রহণযোগ্যতা হারাননি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দলের প্রতি ত্যাগ, নিষ্ঠা ও অবদানের ভিত্তিতে প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে জরিপ চালিয়েছেন এবং আরও করবেন, যার মাধ্যমে যোগ্যতম প্রার্থী নির্বাচন হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল, যা সব সময় ভোটের জন্য প্রস্তুত। আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠন পরিচালনার পাশাপাশি নির্বাচনও দলীয় কার্যক্রমের অঙ্গ। তাই নির্বাচনের জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই, কারণ দল সবসময় প্রস্তুত।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক