লন্ডনে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পত্তি জব্দ: কী বলছেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের?

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিপুল সম্পদ জব্দের খবর প্রকাশ্যে আসার পর প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের জানিয়েছেন, এটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বড় বিজয়। তিনি বলেন, "যারা প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন, তারা হয়তো ইউটিউবে গল্প বানান না, টকশোতে ফুলঝুরি ছাড়েন না, কিন্তু তাদের কাজের শক্তিই এই ধরনের জবাবদিহি নিশ্চিত করে।"

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে জুলকারনাইন লেখেন:

"আমরা যারা সঠিকভাবে সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করছি, তারা হয়তো টকশোতে কথার ফুলঝুরি ছোটাতে পারি না, ইউটিউবে গল্প ফাঁদতে পারি না, কিন্তু সন্তুষ্টি লাগে যখন দেখি আমাদের কাজ কথা বলে। এবং সেটা সেই সব লোকের বিরুদ্ধে- যারা প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী, বিত্তবান ও দুর্নীতিগ্রস্ত। এটাই আমাদের বিজয় এবং এটাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শক্তি।"

এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) কর্তৃক প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে। বুধবার (১১ জুন) স্থানীয় সময় রাতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) জানায়, তারা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন একাধিক সম্পত্তির ওপর ফ্রিজিং অর্ডার (অবরুদ্ধ আদেশ) পেয়েছে, যা বর্তমানে একটি বেসামরিক তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ। NCA-এর এই পদক্ষেপের ফলে এসব সম্পত্তি তিনি আর বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।

আল জাজিরার অনুসন্ধান বলছে, সাবেক এই মন্ত্রী যুক্তরাজ্যে ৩৫০টির বেশি সম্পত্তির মালিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লন্ডনের সেন্ট জনস উড এলাকায় একটি বিলাসবহুল বাসভবন, যার মূল্য প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা।

এই সম্পত্তিগুলোই বর্তমানে যুক্তরাজ্য সরকারের তদন্তের আওতায় এসেছে এবং “মানি লন্ডারিং” ও “অবৈধ অর্থপাচার”-এর সম্ভাব্য প্রমাণ হিসেবে সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আইনি অনুরোধের পরেই এনসিএ এই তদন্ত ও ফ্রিজিং অর্ডার কার্যকর করেছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশে তদন্তও চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে, এবং এই জব্দকরণ তারই অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী সম্পর্কে প্রথম বড় ধরনের তথ্য প্রকাশ পায় আল জাজিরার তথ্যচিত্র ‘The Minister's Millions’-এ, যেখানে তার বিদেশে অর্জিত বিপুল সম্পদের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ছিলেন এই অনুসন্ধানী রিপোর্টিং দলের একজন অন্যতম সদস্য, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশি প্রভাবশালী রাজনীতিকদের বিদেশে অর্জিত অবৈধ সম্পদ নিয়ে কাজ করে আসছেন।