মগবাজারের সেই ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৩ জনই গ্রেপ্তার

রাজধানীর মগবাজারে এক শিক্ষার্থীর ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি চাপাতি এবং ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু। তিনি জানান, এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, দিনের আলোয় মগবাজারে এক তরুণকে ঘিরে ধরে তিন মোটরসাইকেল আরোহী। হেলমেট পরিহিত দুইজন তরুণকে গেটের পাশে নিয়ে গিয়ে চাপাতি দেখিয়ে তার ব্যাগ, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ঘটনাটি ঘটে গত ১৯ মে ভোরবেলায়, তবে ভিডিওটি সম্প্রতি ভাইরাল হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জানান, তিনি সেদিন ভোরে মগবাজারে মামাতো বোনের বাসা থেকে গ্রামে যাচ্ছিলেন। গ্রিনওয়ে গলিতে পৌঁছানো মাত্র তিনজন ছিনতাইকারী বাইকে এসে তাকে ঘিরে ফেলে। দুজন বাইক থেকে নেমে তাঁর কলার ধরে একটি গেটের পাশে নিয়ে যায় এবং চাপাতি হাতে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আব্দুল্লাহ জানান, তাঁর ব্যাগে ছিল অফিসের কিছু টাকা এবং কলেজের পরীক্ষার ফি বাবদ মোট ১৪ হাজার টাকা। তিনি ছিনতাইকারীদের কাছে বারবার অনুরোধ করেছিলেন অন্তত ব্যাগটা রেখে যেতে, কিন্তু তারা কোনো কথা না বলে আরও চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়।

আব্দুল্লাহ বলেন, "আমি অনেকবার বলেছি, অন্তত ব্যাগটা রেখে যান, আমার পরীক্ষার টাকা আছে। কিন্তু তারা শুধু চাপাতি চালিয়েছে। পাঁচবার কোপ মারার চেষ্টা করে, শরীরের কয়েক জায়গায় লাগে। কাটা না পড়লেও রক্তক্ষরণ আর ব্যথা হয়েছে প্রচুর।"

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রথমে হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ না নিয়ে তাকে আগে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয় বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, "ঘটনার পরপরই থানায় গিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে রিপোর্ট আনতে বলে। আমি মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে গেলে তারা ঢাকা মেডিকেলে যেতে বলে। আমি শরীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় আর যেতে পারিনি। পরে ২৫ মে রাতে মামলা করি।"

আব্দুল্লাহ বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করছেন এবং পল্টনের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পড়াশোনার খরচ বাবদ কিছু টাকা মামাতো বোনের বাসায় জমা রেখেছিলেন। সেখান থেকে সেই টাকা নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে যাচ্ছিলেন তিনি, কিন্তু পথেই ছিনতাইয়ের শিকার হন।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার তিন ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনাটিকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।