ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ইসরাইলের গাজা আগ্রাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির ওপর অনির্দিষ্টকালীন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াদেফুল। মঙ্গলবার (২৭ মে) জার্মান একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

ওয়াদেফুল বলেন, “গাজায় নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা এবং ত্রাণ প্রবাহে বাধা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ইসরাইলের এমন কর্মকাণ্ডকে আর জার্মান অস্ত্রের মাধ্যমে সমর্থন করা যাবে না।” তিনি স্পষ্ট করে জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে — এমন কোনও কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য জার্মানি আর কোনও অস্ত্র ইসরাইলকে দেবে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, “ইসরাইলের প্রতি আমাদের ঐতিহাসিক সহানুভূতি এক রাজনৈতিক লাইসেন্স নয়। ইহুদিবিদ্বেষ রোধ ও ইসরায়েলের নিরাপত্তার পক্ষে আমাদের অঙ্গীকার অটুট থাকলেও, গাজার এই যুদ্ধের ভয়াবহতা আমাদের চিন্তার জায়গায় পরিবর্তন এনেছে।”

একই দিনে ফিনল্যান্ডে এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর মার্জ বলেন, “হামাসকে দমন করার অজুহাতে সাধারণ মানুষের ওপর বিমান হামলা চালানো গ্রহণযোগ্য নয়। ইসরায়েল এখন আসলে কী অর্জন করতে চাইছে, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, কিন্তু সেই নিরাপত্তার নামে যদি শত শত শিশুর মৃত্যু হয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনকে লঙ্ঘনের শামিল।”

গাজা যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিল ওয়াশিংটন ও বার্লিনসহ পশ্চিমা বিশ্ব। তবে চলমান সংঘর্ষে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েল নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জার্মানির এই অবস্থান পরিবর্তন শুধুমাত্র কূটনৈতিক নয়, বরং তা দেশটির অভ্যন্তরীণ জনমতের প্রতিফলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জমানার ইহুদি গণহত্যার কারণে গঠিত ‘স্ট্যাটসরেজন’ নীতির ভিত্তিতে জার্মানি সবসময় ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষায় দৃঢ় থেকেছে। কিন্তু বর্তমান গাজা পরিস্থিতিতে সেই অবস্থান ক্রমেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

সম্প্রতি পরিচালিত একাধিক জরিপে দেখা গেছে, ৫১% জার্মান নাগরিক এখন ইসরাইলে অস্ত্র রফতানির বিপক্ষে। ২০২১ সালে যেখানে ৪৬% মানুষ ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন, ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে ৩৬%-এ।