লালমনিরহাটে আগুনে পুড়ে ছয়জন নিহত, ৭৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

লালমনিরহাটে গত বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আগুনে পুড়ে ছয়জন নিহতের ঘটনায় এবার আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যা মামলা করা হয়েছে। নিহতদের একজন সহযোদ্ধা দাবি করা তরুণ আরমান আরিফ এই মামলার বাদী। মামলায় মোট ৭৩ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাঁদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট লালমনিরহাট শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার–সংলগ্ন বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। ভবনটি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন ওরফে সুমন খানের মালিকানাধীন বলে জানা গেছে। আগুনে পুড়ে ছয়জন প্রাণ হারান, যাঁরা সবাই স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অংশ ছিলেন বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।

প্রায় দশ মাস পর, চলতি সপ্তাহের সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এরপর রাতেই অভিযান চালিয়ে ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ছাড়াও আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থক হিসেবে পরিচিত আরও চারজন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন ছাত্র-জনতার একটি মিছিল সুমন খানের বাড়ির সামনে গেলে আওয়ামী লীগপন্থী লোকজনের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর ছয়জন আন্দোলনকারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করা হয় এবং বিকেল চারটার দিকে তাঁদের সুমন খানের বাড়িতে আটকে রেখে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত ছয়জন তরুণ হলেন—জোবায়ের হোসেন (১৭), শাহরিয়ার রিয়াদ ওরফে তন্ময় (১৯), শাহরিয়ার আল আফরোজ ওরফে শ্রাবণ (১৮), জনি মিয়া (২০), রাধিক হোসেন ওরফে রুশো (১৯), এবং রাজিব উল করিম সরকার (১৮)। তাঁরা সবাই বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

মামলার বাদী আরমান আরিফ বলেন, "আমাদের ছয় সহযোদ্ধাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতদিনেও কোনো সুবিচার হয়নি, তাই বাধ্য হয়ে আমি মামলা করেছি।"

পুলিশ জানিয়েছে, মামলায় সুমন খানসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।